তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের বৈঠক

নাম সর্বস্ব ও অনিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন-ক্রোড়পত্র দেওয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম। এছাড়াও এসব পত্রিকার মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে এ সংগঠন।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানায় তারা। বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ-সংখ্যা বাড়াতে হবে। ই-টেন্ডারিংয়ের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য সব সরকারি বিজ্ঞাপন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি এবং জাতীয় পর্যায়ে ৬টি বাংলা দৈনিক ও ২টি ইংরেজি দৈনিনে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নাম সর্বস্ব ও অনিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রদান বন্ধ করতে হবে। তাদের মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করতে হবে।

সব সরকারি ক্রোড়পত্র ডিএফপির মিডিয়া অনুসারে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন ইকবাল সোবহান।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত যেসব জাতীয় দৈনিক ঢাকার দুই সংবাদপত্র হকার্স সমিতিতে বিতরণ ও বিক্রির জন্য দেওয়া হয় সেগুলো ব্যতীত অন্য পত্রিকায় সরকারের বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বণ্টনের বিষয়ে একটি নীতিভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বণ্টন করতে হবে। প্রতিটি ক্রোড়পত্র অন্তত ৫০টি পত্রিকায় দিতে হবে।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা নির্ধারণে বর্তমান ব্যবস্থাকে সংশোধন করে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দুনীতি মুক্ত করতে হবে। কমিটির তদারকির মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ কমিটিতে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের একজন প্রতিনিধি রাখতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল, বিজ্ঞাপন প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ দিনের বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণের বর্তমান ব্যবস্থা সংশোধন করে সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টনের সুষ্ঠু নীতিমালার আলোকে বিজ্ঞাপন বিতরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদপত্র বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনও কমিটি গঠন করলে সেখানে সম্পাদক ফোরামের প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। সম্পাদকের শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম স্নাতক) ও ১৫ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার সনদ যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পরেই পত্রিকার ডিক্লারেশন দিতে হবে। পত্রিকার সম্পাদক/ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে অবশ্যই পূর্ণকালীন সাংবাদিক হতে হবে। পত্রিকার প্রকৃত সার্কুলেশন যাচাই করে মিডিয়া তালিকাভুক্ত করতে হবে।

তাদের দাবির প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক পত্রিকা আছে, যেগুলো নিয়মিত বের হয় না। যেদিন ক্রোড়পত্র বা বিজ্ঞাপন পায় সেদিন বের হয়, কিন্তু এগুলো দৈনিক পত্রিকা। এর ফলে নিয়মিত বের হওয়া পত্রিকার ক্ষতি হয়। 

অনিয়মিত বের হওয়া পত্রিকা দৈনিক পত্রিকা হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমি ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি, তাই অনেকে আমার ওপর অসন্তুষ্ট। এ ধরনের পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞাপন যাওয়া অনেকটা কমাতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের দাবির প্রেক্ষিতে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

তবে সম্পাদকের ন্যুনতম যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে- এমন প্রস্তাবের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন মন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশে বহু মানুষ আছে যারা মেট্রিক পাস কিন্তু এমএ পাস এমনকি পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের চেয়েও ভালো লেখেন। তাদের সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা আছে। 

মন্ত্রী বলেন, রবি ঠাকুর, কবি নজরুলতো মেট্রিক পাসও করেননি। বিল গেটসকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেল করার জন্য বের করে দেওয়া হয়েছিলে। আমাদের দেশেও এ ধরনের বহু সাংবাদিক, লেখক আছেন যাদের বড় ডিগ্রি নেই। সেজন্য ডিগ্রি পাস হতেই হবে, এটি বলে বার (বাধা-বাধ্যকতা) দিয়ে দেওয়া সঠিক হবে না। 

তিনি বলেন, তবে সম্পাদক হতে হলে সাংবাদিক হিসাবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্চনীয়, এর সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। একই সঙ্গে তাকে পূর্ণকালীন সম্পাদক হতে হবে, তার সঙ্গেও একমত।

বৈঠকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

এসএইচআর/ওএফ