মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ
স্বাধীনতার পর দেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সাড়ে তিন কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। দেশে খাদ্য বিশেষ করে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এলেও ১৬ কোটির বেশি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখনও অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘খাদ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজার পরিস্থিতি : প্রেক্ষিত খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, চাল-গমসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য চাহিদা কতটুকু তা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা নেই। বর্তমান উৎপাদন ও ব্যবহারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও সুবিন্যস্ত নয়। ত্রুটি রয়েছে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবস্থাপনাতে, যা দূর করা অত্যন্ত জরুরি। তাই কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার দিকে যেমন মনোযোগ দিতে হবে এবং সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এবং খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের দেশীয় অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ।
বিজ্ঞাপন
ভার্চুয়াল এই ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাব নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য না থাকার কারণে বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়, যার দায় মন্ত্রণালয়ও এড়াতে পারে না।
কৃষিজমির বাণিজ্যিক ব্যবহার বা শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা কৃষি মন্ত্রণালয় রাখতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের প্রধান ভূমিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, খাদ্য মন্ত্রণালয়ও তা করে থাকে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মূল ভূমিকা সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে, বিশেষত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ক্ষেত্রে। মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অতিথির বক্তব্যে ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে এবং আমদানিও কম করতে হচ্ছে। গম উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় প্রায় ৬০ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়। ২০১০ সাল থেকে আমরা খাদ্যে অর্থাৎ চালে উদ্বৃত্ত উৎপাদন করে যাচ্ছি। তারপরও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের চাল আমদানি করতে হয়। যদিও বাজারে অদৃশ্য হাতের কারণে মাঝে মাঝে দাম বৃদ্ধি পায়, সংকট সৃষ্টি হয়। এ জন্য সরকারকে মজুত বৃদ্ধি করতে হবে, কখনই সাড়ে ১২ লক্ষ টনের নিচে তা হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসডিজি বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে শুধু খাদ্য নয়, সকল বিষয়েই তথ্য নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে, সেটি দূর করার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। করোনাকাল উত্তরণে কৃষিখাতই আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমাদের মোট কৃষিজ জমির ৭৪.৮৫ শতাংশে ধান উৎপাদিত হয়। মোট ধান উৎপাদনের মাত্র ৬ শতাংশ সরকারের মজুতের সক্ষমতা রাখে। দেশে চাল ও গমের উৎপাদন ও ব্যবহার যেভাবে হচ্ছে, সে অনুযায়ী ২০২১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রক্ষেপণ সামঞ্জস্যহীন। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিও গত কয়েক বছরে বেড়েছে। গত ১০ বছরে এ আমদানি নির্ভরতা ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারটিও আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
আরএইচটি/এসকেডি