পরিশোধিত পানি সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটি সংশোধন করতে চাইছে ঢাকা ওয়াসা। এর আগেও প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষে আরো দেড় বছর ও প্রায় ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তব করেছে ওয়াসা। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ জাুনয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী (একনেক) সভায় ওয়াসার ‘ঢাকা এনভারিমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি সংশোধনীর জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর বাইরে আরও পাঁচটি প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ১১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে তিনটি সংশোধন ও তিনটি নতুন প্রকল্প একনেকে পেশ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ঢাকা ওয়াসার প্রকল্পটি ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে আরও ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হবে। সংশোধন হলে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৮ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে এডিবি, এএফডি ও ইআইবি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সংশোধনের মাধ্যমে প্রায় ৫৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পটিতে।

সংশোধনের কারণে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডিজাইন বিল্ড অপারেশন প্যাকেজের দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক প্রস্তাব অনুমোদন, চুক্তি স্বাক্ষর, প্রকল্পের প্যাকেজ প্রক্রিয়াকরণ, জমি অধিগ্রহণ, রাস্তা খননের ফির সাথে সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট বিল দেওয়ার প্রচলন অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রকল্পে বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় বৃদ্ধি, বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বৃদ্ধির কারণে কনসালটেন্সি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যানবাহনের জ্বালানী, মেঘনা নদীর পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পে অনেক আইটেমের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটির ওপর গত ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছি। পিইসি সভায় অনেক কিছু কাটছাঁট করে প্রকল্পটি একনেক সভায় সংশোধনীর জন্য তোলা হচ্ছে।

একনেকে উপস্থাপিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-
‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে প্রায় ৬৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

‘টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অীধদপ্তর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬০.৬৩ কিলোমিটার রাস্তা, ড্রেন ১৭.৫৪ কিলোমিটার, ব্রীজ ১০১ মিটিার, কালভার্ট ২৭ মিটার ও দুই পৌরসভার মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।

‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতুগুলোর পুনর্বাসন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পটিও একনেকে তোলা হবে। সংশোধনীতে এ প্রকল্পের এক হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হচ্ছে। এ প্রকল্পের কিছু অংশে ব্যয় বেড়েছে আবার কিছু অংশে ব্যয় কমছে। এপ্রিল ২০১৩ থেকে অক্টোবর ২০২১ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন মেয়াদ জানুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হবে।

‘যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অনুমোদনের পর জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৩ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ৮০টি গাড়ি ক্রয় করা, কম্পিউটার ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় ৪৩টি, অফিস সরঞ্জাম ক্রয় ৪০৫টি আসবাবপত্র ক্রয় ৪ হাজার ৭০৮টি এবং প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন’ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সালে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

এসআর/ওএফ