এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তার ২১ সহযোগী মিলেমিশে পাঁচটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩০ কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে। প্রতিটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে পি কে হালদারকে। 

রোববার (১৪ নভেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর চার কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। সংস্থাটির সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। পাঁচ মামলায় পি কে হালদারসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেডের নামে মামলা

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেড নামের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের জাল রেকর্ডপত্রাদি প্রস্তুত করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল  সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন আসামিরা। যা বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উক্ত অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। যে কারণে পি কে হালদারসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদার, তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেডের এমডি মো. মুনিরুল ইসলাম, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি রাশেদুল হক, পরিচালক মো. নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জী, নাসিম আনোয়ার, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই।

জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের নামে মামলা

জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজকেও একই প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ৩০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে আসামিরা মিলেমিশে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। দুদক উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

এ মামলায়ও নয়জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- পি কে হালদার, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের মালিক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি রাশেদুল হক, পরিচালক মো. নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জী, নাসিম আনোয়ার, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই।

প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার / ফাইল ছবি

গ্রীণলাইন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে মামলা

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কোনো ঋণ আবেদন ও কোনো মর্টগেজ ছাড়াই কাগুজে প্রতিষ্ঠান গ্রীণলাইন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাস ও পরিচালক পূর্ণিমা রানী হালদারকে ৬০ কোটি টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে ওই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন আসামিরা। এ মামলায় পি কে হালদারসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

এ মামলার আসামিরা হলেন- রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের পি কে হালদার, গ্রীণলাইন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি রাশেদুল হক, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুল আলম, জহিরুল আলম, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, মো. আনোয়ারুল কবীর, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, এভিপি আল মামুন সোহাগ ও সিনিয়র অফিসার ইয়াসির বিন ইউসুফ।

এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে মামলা

ভুয়া প্রতিষ্ঠান এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস হতে ঋণবাবদ ৬০ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যে কারণে পি কে হালদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান।

এ মামলার আসামিরা হলেন- পি কে হালদার, এমটিবি মেরিন লিমিটেডের এমডি সনজীব কুমার হাওলাদার, পরিচালক পূর্ণিমা রানী হালদার, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি রাশেদুল হক, সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুল আলম, জহিরুল আলম ও মোহাম্মদ আবুল হাসেম, মো. নুরুজ্জামান।

পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে মামলা

পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে ৪৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অভিযোগে আসামি করা হয়েছে পি কে হালদারসহ মোট ১৩ জনকে। মামলার বাদী হলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান।

আসামিরা হলেন- রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদার, পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান উদ্ধব মল্লিক ও এমডি মৈত্রেয়ী রানী বেপারী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি রাশেদুল হক, পরিচালক মো. নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জী, সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুল আলম, জহিরুল আলম, মো. আনোয়ারুল কবীর, মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও মো. নুরুজ্জামান।

অর্থ আত্মসাৎ, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক বিদেশে পাচারের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।

এদিন (রোববার) কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৩২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে সাত মামলার অনুমোদন দেয় দুদক। যার মধ্যে পাঁচটি মামলা দায়ের হলো।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। এখন পর্যন্ত পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড সংক্রান্ত দুর্নীতিতে মোট ১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।

আরএম/এমএআর/