সংঘর্ষের মধ্যেও ভোট দিতে এলেন ১১৫ বছরের বৃদ্ধা
চসিক নির্বাচনে ভোট দিলেন ১১৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা হজরুন নেসা /ছবি- ঢাকা পোস্ট
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে নগরীর খুলশী থানার ইউসেফ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রে নির্বাচনী সংহিসতায় একজন খুন হন। এ নিয়ে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছিল। এতসব ঘটনার মধ্যেও সবার নজর কাড়েন ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ১১৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা হজরুন নেসা।
জানা গেছে, হজরুন নেসা আমবাগান এলাকায় থাকেন। তার দুই মেয়ে আয়েশা আক্তার, নাজমা বেগম। দুই ছেলের মধ্যে একজন আবুল হাসনাত আরেকজন সুলতান আহমদে। এরমধ্যে সুলতান মারা গেছেন। তিনি মেয়ে আয়েশা আক্তারের কাছে আমবাগান রেললাইনের পাশে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
ভোট দিয়ে তিনি বললেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে ভোট দিচ্ছি। প্রতিবারই ভোট দিয়েছি। সংঘর্ষ হয়েছে জানি। ভয় পেলে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। ভালো মানুষ নির্বাচিত হবে না। তাই সংঘর্ষ, মারামারির মধ্যেও নিজের ভোট দিলাম।’
নানি হজরুন নেসাকে কোলে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন নাতি কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকেই নানি ভোট দিতে উদগ্রীব ছিলেন। সকাল ৮টায় নিজেই রেডি হয়ে কেন্দ্রে আসার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। তাই নানির আবদার মেটাতে সংঘর্ষের মধ্যেও কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সকাল ৯টার দিকে খুলশী থানার ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আলাউদ্দিন আলু (২৮) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে র্যাব, পুলিশ ও সোয়াত টিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত লোকজনের ওপর হামলা চালায় ও গুলি ছুঁড়ে। আলাউদ্দিন আলু ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন। দৌড়ে পালানোর সময় তার বুকের নিচে গুলি লাগে। মরদেহ বর্তমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির বোন জাহানার জানান, আমার ভাই রিকশাচালক ছিলেন। সকাল ৮টার দিকে নাস্তা শেষ করে বাইরে আসে। এ সময় লোকজনকে দৌড়াতে দেখে সেও পালাতে যায়। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, ভেতরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে সকালে বহদ্দারহাটের এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অনিয়ম বিশ্বকে দেখিয়ে দেব। ভোট ডাকাতির মহোৎসব চলছে, প্রশাসন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতাতে উঠেপড়ে লেগেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মোট ৭ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশে ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। অন্যদিকে, ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। এ নির্বাচনে ৪০টি ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ রয়েছে।
ওএফ