দুর্নীতির সূচকে ২ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ : টিআইবি
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের আরও দুই ধাপ অবনতি হয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০ এ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১২তম।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
সিপিআই-২০২০ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল থেকে প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচকে বৈশ্বিক গড় স্কোরের (৪৩) তুলনায় এবারও বাংলাদেশের স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গতবারের মতোই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে থাকায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন ড. ইফতেখার।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রবণতা তুলে ধরে টিআইবি জানায়, কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষাপটে এর ভয়াবহতা ও বিস্তৃতি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শুধুই প্রতিশ্রুতি’ কিংবা ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ আর ‘স্বল্প পরিসরের অভিযানে’র বাইরে গিয়ে আরও বিস্তৃত, কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তৃতীয়বারের মতো অপরিবর্তিত রয়েছে, আপাতত এটি স্বস্তিকর মনে হলেও নিম্নক্রম অনুসারে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে থাকা সোমালিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশেরও স্কোর তিন পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, তাই বাংলাদেশের অপরিবর্তিত স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। ২০২০ সালে ০-১০০ স্কেলে গত দুই বছরের মতোই ২৬ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৮০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন থেকে গণনা করে দেখা যায়, ২০১৯ এর তুলনায় দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। তবে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থেকে ১৪৬তম।
এবার একই স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ১২তম অবস্থানে আছে উজবেকিস্তান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।
দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিব্রতকর-হতাশাব্যাঞ্জক
ড. জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও তা বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন আর এশিয়া প্যাসিফিকের ৩১টি দেশের মধ্যে অবস্থান চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা বিব্রতকর ও হতাশাব্যাঞ্জক। আমাদের আরও ভালো করার সামর্থ্য ছিল; যদি রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা যেত এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির ঘটনা অস্বীকার কিংবা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না করে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতো তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানে আরও উন্নতি হতে পারত।’
স্বাস্থ্যখাতে প্রকট দুর্নীতি বড় বাধা
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটময় মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্যখাতে প্রকটভাবে প্রকাশিত দুর্নীতি বাংলাদেশের দুর্নীতি সূচক উন্নতিতে বড় বাধা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র ঘোষণা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার প্রকাশ হলেও এর প্রয়োগে ঘাটতি আছে, বাস্তবে তা ঘোষণাতেই আটকে আছে। বিশেষ করে এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত মহল ও প্রতিষ্ঠানসমূহে দুর্নীতির যোগসাজশ, সহায়ক ও সুবিধাভোগীদের প্রভাবের কারণে অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।’
আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৮৮ স্কোর পেয়ে এবারও যৌথভাবে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। ৮৫ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে নরওয়ে। আর সর্বনিম্ন ১২ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া। ১৪ স্কোর পেয়ে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া; এবং ১৫ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন ও ভেনেজুয়েলা।
জেইউ/এফআর