জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় দ্রুত টিকা সরবরাহে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, গ্যাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও সিইপিআইকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। 

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত মহামারির পরবর্তী সময়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বলিষ্ঠ আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেরুয়াসুস গত মাসে এক চিঠিতে করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সঠিক সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে দূতাবাস জানায়, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এক সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বোর্ডের সভায় পাঁচটি রেজুলেশন ও ১৩টি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এতে মানসিক স্বাস্থ্য ও ওরাল হেলথ সংক্রান্ত দুটি রেজুলেশনে কো-স্পনসর করে বাংলাদেশ।

সবাই টিকা পাবে : ডব্লিউএইচও
এদিকে গত ২০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহকারী মহাপরিচালক মারিয়াঞ্জেলা সিমাও বলেছেন, টিকা পাওয়া নিয়ে কারও আতঙ্কিত হওয়া কিছু নেই। যারাই টিকা চান, তারা পাবেন। সারা বিশ্বের মানুষ যাতে করোনাভাইরাসের টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থাটি কাজ করছে।

দরিদ্র দেশকে উৎপাদন মূল্যে ৪ কোটি ভ্যাকসিন দেবে ফাইজার
বিশ্বের অনেক ধনী দেশ করোনার লাগাম টেনে ধরতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও দরিদ্র দেশগুলো টিকা কর্মসূচি শুরু করা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি জায়ান্ট ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ঘোষণা দিয়েছে, উৎপাদন খরচে বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৪ কোটি ডোজ দেবে তারা। 

ফেব্রুয়ারিতে প্রথম চালানের আশা 
স্বল্প আয়ের দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী ন্যায্য বিতরণ প্রচেষ্টা চালানো কোভ্যাক্স আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের প্রথম চালান পাঠানোর আশা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এর গভীর সহযোগী হচ্ছে কোভ্যাক্স। 

এখন পর্যন্ত জরুরি ব্যবহারে ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন হচ্ছে অন্যতম। ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ফাইজারের চেয়ারম্যান বলেছেন, বিশ্বের অবশিষ্ট হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একইভাবে ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

কোভ্যাক্স সুবিধায় ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে বাংলাদেশ
কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে বাংলাদেশ ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকারী ভিত্তিতে কাদের কী পরিমাণ টিকা দেয়া হবে তা জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর (টাঙ্গাইল-৬) এক প্রশ্নের জবাবে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

প্রথম পর্যায়ে টিকা বিতরণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের মোট ১ কোটি ৫০ লাখ লোক (জনসংখ্যার ৮.৮৬%) দুই ডোজ টিকা পাবেন। টিকাগুলো দেশের ৬৪ জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হবে।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশ টিকাদান
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশ টিকাদান শুরু হবে।

ভারতের উপহার দেওয়া কোভিশিল্ড নামের টিকা দিয়ে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এই টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত টিকা; যা তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। উপহারের টিকার বাইরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার চুক্তি রয়েছে। 

এনআই/এইচকে