শতবর্ষী মর্জিনা - ছবি : ঢাকা পোস্ট

দুই বছর আগে দুর্ঘটনায় পা ভাঙে মর্জিনার। সেইসঙ্গে ভাঙে তার কপাল। শতবর্ষী মর্জিনা এখন হুইল চেয়ারে ভিক্ষা করেন পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বরে। অথচ ১০১ বছর বয়সী এ বৃদ্ধার রয়েছে দুই সন্তান। গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জে আছে জমিও। 

রাজধানীর শ্যামপুরে ভাড়াবাসায় থাকেন মর্জিনা। তিনি বলেন, ‘আমার তো দুই দুইটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে মরছে। দুইটা মেয়ে আছে এখন। তারা আমারে ফালাইয়া রাইখা চলে গেছে।’

মর্জিনার এক মেয়ের স্বামীর নাম সফিকুর। পেশায় রিকশাচালক। তিনিই রিকশায় করে মর্জিনাকে পৌঁছে দেন আদালত পাড়ায়। মর্জিনা বলেন, ‘হে আমারে রিকশা দিয়া নিয়া আসে, আবার নিয়া যায়। তারে দুইশ টাকা দেই।’ 

সফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার এক মেয়ে আছে, পরিবার আছে। নিজেরই সংসার চলে না। আমার শাশুড়ির দুই বছর আগে অ্যাক্সিডেন্টে পা ভাঙছে। এরপর আর হাঁটতে পারে না। একা একা চলতে পারে না। তার খাওয়া-দাওয়া, ওষুধ, বাসাভাড়া চালাতে অনেক কষ্ট হয়।’

মর্জিনা বলেন, ‘আমি বহু কষ্টে আছি। আমারে দেখাশুনার মানুষ নাই। মানুষে দুইডা ভাত দিলে খাই, না দিলে না খাইয়া পইড়া থাকি। আমি দেড় বছর ধইরা কোর্টে আসি। এখান থেকে যা পাই তার আড়াই হাজার টাকা দেই ঘর ভাড়া। ডাক্তারের খরছ দেই, আবার নিজে খাই।’

‘নিজের তো একটু ভালো-মন্দ খাইতে মন চায়’ জানিয়ে মর্জিনা বলেন, ‘আমার দুইটা মেয়ে দুইখানে থাকে। তারা আমার সাথে ঝগড়া কইরা আমারে ফালায় চইলা গেছে। পেটের দায়ে সপ্তায় দুই দিন সকাল ৯টায় কোর্টে আসি, বিকাল ৫টায় বাসায় যাই।’

মর্জিনার গ্রামের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া। তিনি সেখানে থাকেন না। মর্জিনা বলেন, ‘আমার সৎ ভাইরা আছে। তারা আমার জমি খায়। আমারে বছরে কিছু টাকা দেয় তারা। আমি চোখে দেখি না, হাঁটতে পারি না, এখান থেকে ওইখানে যেতে পারি না, একটু দাঁড়াতে পারি না।’

মর্জিনা বলেন, ‘আমি বাড়িওয়ালারে বলছি, ভাড়াটা মাফ কইরা দেন। আমি তো কামাইতে পারি না। কোনো কিচ্ছু পারি না, কীভাবে আমি ঘর ভাড়া দেই?’

টিএইচ/এইচকে