রোহিঙ্গা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস
জাতিসংঘ থেকে মিয়ানমারকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে চাপ দিচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানান।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি পাঠান। ফিরতি চিঠিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়ে জাতিসংঘ বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে গুতেরেস।
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটির প্রধান চিঠিতে বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন চায়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরতসহ সেখানে গিয়ে তারা যেন নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেদিকেই জোর দিচ্ছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকে বাংলাদেশের পাশে ছিল জাতিসংঘ। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ তাদের ভরণ-পোষণে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি। তবে প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে মনোমালিন্যও ছিল সংস্থাটির। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনও কয়েকবার প্রত্যাবাসন ইস্যুতে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে সরকারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয় জাতিসংঘের। কারণ রোহিঙ্গাদের এখনই ভাসানচরে স্থানান্তরের পক্ষে ছিল না সংস্থাটি। তবে জাতিসংঘের মনোমালিন্য উপেক্ষা করে এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের চারটি দল ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আবাসন নির্মাণ করে সরকার। দ্বীপটিতে অনেক আগে থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা করছিল সরকার। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না।
অবশেষে টেকনাফ ও উখিয়ায় থাকা রোহিঙ্গার মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জনকে প্রথম দফায় ভাসানচরে নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ২৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ওই দ্বীপে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে পৌঁছায়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ও শনিবার তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭৭৮ জন ও ১ হাজার ৪৪৬ জনের রোহিঙ্গাদের দুটি দল নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে।
অ্যান্তোনিও গুতেরেস চিঠিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে সংস্থাটির মিয়ানমার বিষয়ক দূতকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। আগে থেকেই দেশে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিলেন।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে গত ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসে। সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের অঞ্চলভিত্তিক প্রত্যাবাসন চাইলেও মিয়ানমার ২০১৭ সালের করা চুক্তির পক্ষেই থাকে।
এনআই/ওএফ