দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: ছবি- সংগৃহীত
সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে যে যাই বলুক শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস করি সততা নিয়ে কাজ করলে, সেই কাজের সুফল জনগণ পেলে সেটাই তৃপ্তি। কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে অবশ্যই দেশকে উন্নতি করা যায়। আমরা সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যার সুফল এদেশের মানুষ পাবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর আমরা জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের জন্য কাজ করছি। টানা সরকার গঠন করার কারণে উন্নয়ন কাজগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, সেই ভোটের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের সেবা করা আমাদের কাজ। উন্নয়ন করার ইচ্ছা থাকলে তা করা যায়। আমরা তা প্রমাণ করেছি। দেশের মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। কল্যাণ হচ্ছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে।
পঁচাত্তর পরবর্তী শাসনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় নির্বাচনে কী জনগণের আদৌ ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল? ছিল না। মিলিটারি শাসকেরা যেটা ঠিক করে দিত সেটাই হত। না হলে পরিবর্তন করা হত। রেজাল্টও পরিবর্তন হয়েছে। অনেককে কিন্তু পদত্যাগ করতেও হয়েছে। আমরা আন্দোলন করেছি। জনগণ আন্দোলন করেছে, যার কারণে তাদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। পরে এতিমের অর্থ আত্মসাতের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতির পুরো ভাষণটি পড়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সরকারের কী উন্নয়ন হয়েছে তা জানা যাবে। জানা যাবে সরকার ভবিষ্যতে কী করতে চায় সেটাও। ২০২১ সাল আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে পদার্পণ করেছি। রজতজয়ন্তীতে ক্ষমতায় ছিলাম। সৌভাগ্য যে সুবর্ণজয়ন্তীতেও ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি। সুবর্ণজয়ন্তী পালনে আমাদের অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল। বছরব্যাপী আমরা অনুষ্ঠান করব। অনেক অনুষ্ঠান আমাদের চিন্তায় আছে। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ দেখা দিয়েছে। আমাদের এজন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমরা সব কর্মসূচি নিয়েছি। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কর্মসূচি পালন করব। কারণ আমাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষকে সুরক্ষিত রাখা।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিএনপির কাছ থেকে অনেক সমালোচনা শুনি। কিন্তু আমার মনে হয় তারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেন না। অবশ্য চেহারা নিশ্চয়ই দেখেন। মেকআপের জন্য তো দেখতেই হয়। কিন্তু নিজেদের কাজটিতে দেখে না। যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ। যারা ক্ষমতায় থাকার সময়ে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে যাদের কারাবরণ করতে হয়। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির মামলা ও গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এরা যখন কোনো দলের নেতৃত্বে থাকে। সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে? বিএনপিরও তো এখন সেই দশা। তাদের নেতৃত্বের অভাব। কাজেই যতই বক্তৃতার দিক আর যতই কথা বলুক। সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিরা যখন একটি দলের নেতা তাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে না। সেই আস্থা বিশ্বাস মানুষের নেই। আস্থার জায়গাটা থেকে সরে গেছে।
‘মুজিবের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। কেউ ঠিকানাবিহীন থাকবে না’- এটা সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমরা গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যারাক নির্মাণ করে মানুষের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ব্যারাক হাউসে সাড়ে তিন হাজার আর ছোট ছোট ঘর করে প্রায় ৬৬ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। আরও এক লাখ মানুষের ঘর তৈরির কাজ চলমান আছে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে অনলাইনে পাঠ চলমান রয়েছে। আমরা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছি। তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। শতভাগ পাসের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে তারা স্কুল-কলেজে যেতে না পারার যে দুঃখ ছিল তা দূর হবে। করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলেই আমরা স্কুল-কলেজ সব খুলে দেব। তখন ছেলে-মেয়েরা আরও সুন্দরভারে পড়াশোনা করতে পারবে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে যখন গবেষণা শুরু হয়েছিল, কারা কারা এটা করছে, সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা নিয়ে রাখা। এজন্য আমরা অগ্রিম টাকা দিয়ে দিয়েছি। এক হাজার কোটি টাকা আমরা ভ্যাকসিনের জন্য আগাম দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখনই স্বীকৃতি দিয়েছি আমরা সঙ্গে সঙ্গে কিনেছি। আমরা জানি এটা নিয়ে অনেক কথা ও সমালোচনা হয়। অনেক ব্যাঙ্গ করা হয়। উত্তরটা ভ্যাকসিন আসার পরে বোধ হয় ভ্যাকসিন নিজেই দিয়ে দিয়েছে। যারা সমালোচনা করেছে তাদের মুখেই থাপ্পড় পড়েছে। আমাদের কিছু করা লাগেনি।
তিনি বলেন, আমরা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করেছি। ভারত ২০ লাখ ডোট উপহার হিসেবে দিয়েছে। কেনা ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ইতিমধ্যে এসে গেছে। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকভাবে দেওয়াও শুরু হয়েছে। দেওয়ার পর কী রিঅ্যাকশন- খুব খারাপ রিঅ্যাকশন শোনা যায়নি। ৪/৫ জনের হাতে একটু ব্যাথা হয়েছে। হালকা জ্বর হয়েছে। আগামী ৬ বা ৮ তারিখ থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। কারা চায় তারা রেজিস্ট্রেশন করবে। যারা চাইবেন তাদের করোনার টিকা দেওয়া হবে। কে কে চায় তা বলতে হবে। ভ্যাকসিন যারা নেবেন তাদেরও মাস্ক পরে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাস না যাবে ততদিনই এটা মেনে চলতে হবে। তাছাড়া অ্যান্টিবড়ি টেস্টের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেটাও করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা বিশ্ব থেকে সাধুবাদ শুনেছি। কিন্তু কেবল শুনি না নিজের দেশের ভেতরে। গুজব রচনা করে। মিথ্যা কথা বলে। অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা বিএনপির জন্মগত চরিত্র। তাদের কথা তারা বলে যাবে। আমাদের কাজ আমরা করে জনগণকে সেবা দিয়ে যাব। কথা তো তাদের বলতে দিতে হবে। না বললে পেটের মধ্যে গুড় গুড় করবে। আর বলে ফেললে বাতাসে উড়ে যাবে।
পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনার জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু নিয়ে এত কথা। অথচ এরকম একটি কাজ নিজেদের অর্থায়নে করলাম। তার প্রশংসা তো করতেই পারল না। উল্টো বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলে জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু করা হয়েছে। কেউ এতে উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কীভাবে? সেতু দিয়ে পার না হলে তো নৌকায়ই যেতে হবে। উপায় তো নেই। নৌকায় চড়তে হবে। আমাদের নৌকা অনেক বড় কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের নৌকা বড় সবাইকে নেব। তবে বেছে নেব, যাতে নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে।
করোনা সংক্রমণের সময় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগকে বাইরে বের হওয়ার জন্য একটি সুযোগ হিসেবে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার সময়ে সংসদ অধিবেশনর সময়গুলো ভালো কেটেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো বড় একটি কারাগারে বন্দি আছি। সংসদ অধিবেশনে আমার সময় কাটে। এজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
এইউএ/জেডএস