দেশের পাট ও চিনি কলগুলো বন্ধ না করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালুর দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ- স্কপ। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান বক্তারা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছে। এরপর আরও রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত ঘোষণা করেছে। স্বৈরাচারী সরকার হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ এক নোটিশে ৩৪টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন বিরাষ্ট্রীয়করণের প্রতিবাদে আন্দোলন করার জন্য শ্রমিক ঐক্য পরিষদের জন্ম হয়েছিল। আজকেও শ্রমিকদের ওপর সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারে বাংলাদেশ পাটকল চিনিকলসহ অসংখ্য মিল-কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে শিল্প-কারখানা পেয়েছিল। যখন আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি, তখন একে একে স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে অর্জিত সেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল-চিনিকলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। ভারত পাট উৎপাদনে প্রথম। ভারতের নিজস্ব চাহিদা এতো বেশি যে, পাট রপ্তানি করতে পারে না। পাট রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ।

বক্তারা আরও বলেন, সোনালী আঁশের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। দেশের মুদ্রায়, টাকায় এখনও পর্যন্ত আমরা পাটের পাতার ছবি রেখেছি। পাট আমাদের সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। পাটের সঙ্গে কৃষকের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এই পাট গোটা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে পরিচিতি দিয়েছিল। আজ একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দিয়ে, অন্যদিকে বেসরকারি পাটকল চালু করা হচ্ছে। এখন আমরা দুটি দিক দেখছি, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে সরকার নির্ধারিত মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি, অন্যদিকে বেসরকারি পাটকলের নামে শ্রমিক শোষণের করা কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ২৭শ টাকা বেসিক, ৪-৫ হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকদের খাটায়। শ্রমিকের পরিশ্রমের সমস্ত ঘাম নিগড়ে নিয়ে বেসরকারি পাটকলগুলো দিনের-পর-দিন লাভ করে যাচ্ছে। অথচ সরকারি পাটকলগুলো দুর্নীতির কারণ লোকসানের মুখ দেখছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই কলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য চিনি ও পাটকলগুলো টিকে থাকবে।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার এই ঐতিহ্যবাহী পাট ও চিনি কল বন্ধ না আধুনিকায়ন করুক। এতে করে দেশের শিল্প বাঁচবে, কর্মীরাও বাঁচবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমীন, শ্রমিক নেত্রী শামীমা আরা প্রমুখ।

এইচএন/এনএফ