বাংলাদেশিকর্মীদের জন্য বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি চূড়ান্ত করার জন্য দেশটিকে অনুরোধ করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। একইসঙ্গে মন্ত্রী করোনা কারণে দেশে আটকাপড়াদের ফিরিয়ে নিতে দেশটিকে অনুরোধ করেছেন।

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাক্ষাতে আসেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

জবাবে হাইকিশনার হাজনাহ মো. হাশিম জানান, তিনি তার সরকারের সঙ্গে আটকাপড়াদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরবেন।

এ সময় হাইকমিশনার তার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখায় বাংলাদেশিকর্মী ও পেশাদারদের প্রশংসা করেন। 

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো পথ বন্ধ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। মূলত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে হঠাৎ কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।

পরে অবশ্য ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খোলার আশ্বাস দেয়। এ নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে বেশ কয়েকবার মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের সফর বিনিময় এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হলেও এখন দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। ২০১৯  সালের শেষের দিকে বাংলাদেশিদের জন্য দেশটি শ্রমবাজার খুলে দেওয়া নিয়ে আশার আলো দেখা যায়। তবে হঠাৎ করে দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে আরও বাংলাদেশির জন্য খোলেনি শ্রমবাজার।

অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মালয়েশিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রিকভারি মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (আরএমসিও) জারি করা হয়। এতে দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত অভিবাসীদের মধ্যে নতুন করোনা সংক্রমিতের ক্লাস্টার চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশসহ প্রায় ১২টি দেশের নাগরিকদের মালয়েশিয়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। যা গত ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।  

আরএমসিও শেষ হবার আগে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পেজ সামাল দিতে দেশটি আবারও লকডাউন ঘোষণা করে। এতে করে এখন অবদি আটকাপড়া বাংলাদেশিকর্মীরা সেখানে যেতে পারছে না।

পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের আওতায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়ায় মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের আওতায় শর্ত সাপেক্ষে চারটি খাতে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া, যা চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এ কার্যক্রমে ঢাকা আশা করছে, দেশটিতে থাকা তিনলাখের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবে।

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়ার শক্ত রাজনৈতিক সমর্থের জন্য হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে মালয়েশিয়াকে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপনের জন্যও অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় মোমেন হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভবনার কথা জানিয়ে দেশটিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। হাইকিশনার জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বিষয়ে দেশটি আলোচনা করছে।

বৈঠকে মোমেন উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তি, ভ্রমণ, কৃষি, বাণিজ্য ও এনার্জি খাতে দুই দেশের ভালো সম্ভবনার কথা তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকশিনারকে সব ধরনের আশ্বাস দিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হাইকমিশনার হাশিমের সময়ে আরও বৃদ্ধি পাবে।

এনআই/এসএম