আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাহিনীকে আধুনিকভাবে সাজাতে নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪০ জেলায় অস্ত্র-গোলাবারুদ রাখার জন্য রাইফেল কোত (অস্ত্রগার) নির্মাণের করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ লক্ষ্যে ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার কাম রাইফেল কোত (প্রথম পর্যায়ে ৪০টি জেলায়) নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রকল্পটির জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। বাহিনীতে ৩৯টি পুরুষ আনসার ও ২টি নারী আনসার ব্যাটালিয়নসহ মোট ৪১টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা ও ইউনিয়নে ১টি আনসার প্লাটুন ও ১টি ভিডিপি প্লাটুন এবং প্রতিটি গ্রামে ৩২জন নারী ভিডিপি প্লাটুন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন নির্বাচন, পূজা, কেপিআই সংস্থার নিরাপত্তা এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আরও অনেক কাজে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এজন্য এ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে কিছু আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা হয়েছে। আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে এ বাহিনীর বেশিরভাগ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পুলিশ লাইন অস্ত্রাগারে রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাহিনীটির জন্য রাইফেল কোত নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা সদরে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার নির্মাণ করা হলে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সুরক্ষিত থাকবে। যার ফলে আনসার সদস্যদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও মনোবল-কর্মস্পৃহা বাড়বে এবং বিভিন্ন দুর্যোগ ও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. সেলিম বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি সরাসরি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় বলা আছে, সহিংসতা রোধ, সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ মোকাবিলায় বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব স্তরে ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শক্তিশালী হবে।  

তিনি বলেন, আগামী সপ্তাতে প্রকল্পটির ওপর পিইসি সভা করা হবে। পিইসি সভার জন্য কিছু বিষয় ফাইন্ডআউট করেছি। এগুলো নিয়েই পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে। সভায় অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ফেরদৌসী আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ প্রকল্পটির মাধ্যমে ৪০ জেলায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার কোত নির্মাণ করা হবে। অনেক জেলায় আনসারদের উন্নতমানের রাইফেল কোত রয়েছে। যেসমস্ত জেলায় নেই সেখানে নির্মাণ করা হবে। অন্যান্য বাহিনীদের যেভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে আনসারের সেভাবে নেই। এজন্যই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ৫৩ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, যানবাহন ক্রয় (একটি ডাবল কেবিন পিক আপ ও একটি জিপ), বনায়ন, ১১ হাজার ৪১৭ বর্গমিটারের অনাবাসিক ভবন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা, বহি:পানি ও বহি:বিদ্যুৎ সরবরাহ, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন স্টেশনারি জিনিসপত্র কেনা হবে।

এসআর/এসএম