সাম্প্রতিক সময়ে সচেতনতার অভাবে প্রায়ই প্রাকৃতিক গ্যাস-বায়োগ্যাস জনিত অগ্নি দুর্ঘটনা বা বিস্ফোরণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান কারণ আবদ্ধ জায়গায় গ্যাস জমা হওয়ার কথা উল্লেখ করে গ্যাস দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বিষয়ক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিটার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিটার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে গ্যাস দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বিষয়ক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়াও ওয়াসার সুয়ারেজ লাইনের বর্জ্যের কারণে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয় যা অগ্নি দুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ। তাই গ্রাহকের বাড়ির সেইফটি ট্যাঙ্ক, সামনের রাস্তায় ম্যানহোলের ঢাকনাটিতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা আছে কিনা সতর্কতার সহিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে সুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত টয়লেটের পাইপের মাধ্যমে সুয়ারেজ বর্জ্যে উৎপাদিত বায়োগ্যাস আবদ্ধ ঘরে জমা হতে পারে। আবদ্ধ এলাকা, ঘরের ভিতর তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ না থাকলেও শুধুমাত্র সুয়ারেজ লাইনের উৎপাদিত বায়োগ্যাসের সংস্পর্শে বৈদ্যুতিক স্পার্ক, দিয়াশলাইয়ের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ অথবা তাপ ও চাপের প্রভাবে বড় ধরনের বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়া রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, পানি ও সুয়ারেজ পাইপ স্থাপন, আন্ডার গ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইন ও টেলিফোন লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ইত্যাদি উন্নয়ন কাজ চলাকালে রাস্তায় বিদ্যমান গ্যাসের বিতরণ লাইন এবং গ্রাহকের বাসা-বাড়ির গ্যাসের সার্ভিস পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, লিকেজ হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে সতর্কতার সহিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণ বা ব্যবহার হতে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হয় যা গ্যাস লিকেজ, বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

ঢাকা মহানগর এলাকায় তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন বা সার্ভিস সংযোগের লক উইং কক, রেগুলেটর, মিটার অথবা সংযোগ স্থলসমূহে গ্যাস লিকেজ পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জানাতে বলা হয়েছে। সেখানে জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রর ফোন নম্বরও প্রকাশ করেছে তারা। কেন্দ্র উত্তর (গুলশান-১) ফোন নম্বর ৫৫০৪৫১১৩, ৫৫০৪৫১১৪ মোবাইল নম্বর ০১৯৫৫৫০০৪৯৭, ০১৯৫৫৫০০৩৯৮। এছাড়া জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র দক্ষিণ (মতিঝিল) ফোন নম্বর ২২৩৩৮৩৬৬৭, ২২৩৩৮৩৬৬৮, মোবাইল নম্বর ০১৯৫৫৫০০৪৯৯, ০১৯৫৫৫০০৫০০।

এছাড়া গ্রাহকের এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় স্থাপিত তিতাস গ্যাস, টিঅ্যান্ডডি কোম্পানির বিভিন্ন পাইপ লাইনে গ্যাস লিকেজ পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিতাস গ্যাসের কল সেন্টার ১৬৪৯৬ নম্বর কল করতে বলা হয়েছে যা ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে। 

অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে করণীয়

অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে বাসা-বাড়িতে আবদ্ধ এলাকায় প্রথম অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা না জ্বালিয়ে কিংবা বৈদ্যুতিক বাতি ফ্যান না চালিয়ে আবদ্ধ স্থানের চলাচলের পথ, দরজা জানালা খুলে দিয়ে স্বাভাবিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিটার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সেই সঙ্গে চুলা জ্বালানোর পূর্বে চুলার নব, বাটন, হুসপাইপ, পিতলের চাবির কোন গ্যাস লিকেজ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে বাসা বাড়িতে লিকেজ পরিলক্ষিত হলে রাইজারের চাবি বন্ধ করে দেওয়া এবং আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে তিতাস। চুলা জ্বালানোর কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে রান্না ঘরের দরজা জানালা খুলে দিয়ে বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। অকারণে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে না রেখে প্রতিদিন রান্না শেষে, ঘুমানোর আগে ও বাসার বাইরে যাওয়ার আগে গ্যাসের চুলা যথাযথভাবে বন্ধ হয়েছে কি-না নিশ্চিত করার প্রয়োজন। গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গ্যাস ডিটেক্টর অ্যালার্ম স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে তারা।

এএসএস/আইএসএইচ