মাইলেজ জটিলতার অবসান ও ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলের মধ্যে ‘আগের নিয়মে’ পরিশোধ না করা হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (চট্টগ্রাম বিভাগ)।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের পাহাড়তলী লোকোশেডে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটির নেতারা। রানিং স্টাফরা কর্মবিরতিতে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে ট্রেন চলাচল। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের বেতন আজ পর্যন্ত হয়নি, মাইলেজ সমস্যার সমাধান হয়নি, আমাদের আহরিত মাইলেজ না দেওয়ায় রানিং স্টাফরা হতাশ। প্রায় ১ বছর ধরে মাইলেজ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে মন্ত্রী থেকে রেলওয়ে কর্মকর্তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু এখনও তার কোনো সমাধান হয়নি। এছাড়া যারা অবসরে গিয়েছেন তারা পেনশন পাচ্ছেন না। এছাড়া আমাদের বেতন ঠিকভাবে হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে মাইলেজ ৩০ দিনের বেশি দেবেনা। আমরা জানতে পেরেছি এরই মধ্যে গত ডিসেম্বরের রানিং স্টাফদের বেতন-বিল হিসাব বিভাগ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল পাঁচটার মধ্যে বেতন না হলে কর্মবিরতি শুরু হবে চট্টগ্রামে। আর সারাদেশের সিদ্ধান্ত আগামীকাল বৃহস্পতিবার জানানো হবে।

এ দিকে, আজকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলপথ ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়কের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রানিং কর্মচারীদের ডিসেম্বর ২০২১ সালের নিয়মিত বেতন-বিল হিসাব বিভাগ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফলে ১৯ জানুয়ারি তাদের বেতন পরিশোধ হয়নি। এ কারণে রানিং স্টাফরা আউট স্টেশনে ব্যয়ভার বহনে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার স্বার্থে ২০ জানুয়ারির মধ্যে নিয়মিত বেতন বিল পরিশোধের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইল। অন্যথায় রানিং কর্মচারীদের পক্ষে স্বাভাবিক ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে লোকো মাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম), সাব-লোকোমাস্টার বা সান্টিং লোকোমাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্টদেরও মাইলেজ সুবিধায় আনা হয়েছে। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একজন রানিং স্টাফ তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম রয়েছে। তবে রেলের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে কাজে যুক্ত করা হলে বোনাস মাইলেজ সুবিধায় দেয়ারও নিয়ম আছে। রেলওয়েতে তীব্র লোকবল সংকট থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রানিং স্টাফদের বিশ্রামকালীন সময়েও কাজ করতে হচ্ছে। 

রানিং স্টাফরা এভাবে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে কাজ করে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ মাইলেজ জমা করেন তাদের অ্যাকাউন্টে। রেলওয়ে আইনে এ সুবিধাকে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে মাইলেজকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেলকর্মীরা।

কেএম/আইএসএইচ