মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানিতে সিন্ডিকেট চায় না বায়রার একাংশ
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির সিন্ডিকেটের বিষয়ে বায়রার একাংশের সংবাদ সম্মেলন/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সকল দেশের শ্রমবাজার থেকে সব ধরনের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সিন্ডিকেট পদ্ধতি বাতিল করে রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট (বায়রা)।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সেখানে সংগঠনটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক রপ্তানির চুক্তি ও রপ্তানি প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ করলে আপনাদের কাছে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সম্পাদিত জিটুজি প্লাস চুক্তিতে মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা করে, তারা বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর তিন লাখ করে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক আমদানি করবে। অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয় জন প্রতি সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়াতে সংযুক্ত করা হয় অনলাইন সিস্টেম, শ্রমিক রপ্তানির দায়িত্ব দেওয়া হয় এক হাজার ২০০ এজেন্সির পরিবর্তে ১০টি এজেন্সিকে। এটা ছিল জনশক্তি রপ্তানির ইতিহাসে এক জঘন্যতম ষড়যন্ত্র। এই দেশ বিরোধী চক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে দুই দেশের সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি অচল। তাই অনলাইন পদ্ধতি চালু করলে শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় কমে যাবে, দ্রুত গতিতে শ্রমিক পাঠানো যাবে, বেশি সংখ্যক শ্রমিক রপ্তানি করা যাবে এবং শ্রমিক মালিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে।
মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তারা আরও বুঝাতে স্বক্ষম হয় যে, সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে শ্রমিক রপ্তানির সুযোগ দিলে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না, এজেন্সিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে অভিবাসন ব্যয় পূর্বের তুলনায় কয়েকগুন বেড়ে যাবে, দুর্নীতি বেড়ে যাবে তাই কোনো অবস্থাতেই সকল এজেন্সিকে শ্রমিক রপ্তানি করতে দেয়া যাবে না। ১০ এজেন্সি নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানি হলেই শ্রমিকদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে, অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক শ্রমিক রপ্তানি করা যাবে। এমন নানা প্রপাগান্ডা, অনৈতিক লেনদেন, পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ১০ জন নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেট পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কিছু সদস্য জীবন-জীবিকার তাড়নায় বাধ্য হয়ে তাদের সাব এজেন্ট হিসেবে শ্রমিক পাঠালেও নানারকম সমস্যায় পড়েন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা তিল তিল করে ১৯৮৪ সাল থেকে নিজেদের শ্রম, মেধা, মূল্যবান সময় ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গড়ে তোলে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি শ্রমিকের এই বিশাল বাজার। এক সময় এই বাজারে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখের বেশি। এসব শ্রমিক সেখানে গেছে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত সকল এজেন্সি কোনোপ্রকার বাধা ছাড়া সবাই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মালয়েশিয়াতে শ্রমিক রপ্তানি করার সুযোগ পেয়েছে। ২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তার মন্তব্যের কারণে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। বাজারটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে ৬০ হাজার শ্রমিকের কলিং ভিসা ও এক লাখের বেশি শ্রমিক রপ্তানির অনুমোদন ছিল। পরবর্তীতে এই কলিং ভিসা ও অনুমোদনের বিপরীতে একটি শ্রমিকও যেতে পারেনি। এর ফলে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের ক্ষতি হয় ৫০০ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন বাজারটি বন্ধ থাকার পর সরকার অনেক চেষ্টা তদবির করে ২০১২ সালে জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাজারটিতে পুনরায় শ্রমিক রপ্তানি চালু হয়। জি-টু-জি পদ্ধতিটা ছিল কিছু এনজিওদের যড়যন্ত্রের ফল। এই চুক্তির মাধ্যমে ১৫ লাখ শ্রমিক রপ্তানির কথা থাকলেও চার বছরে শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার।
তিনি দাবি করে বলেন, আমরা কোনো সিন্ডিকেট প্রথা দেখতে চাই না, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমরা মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সকল দেশের শ্রম বাজার থেকে সকল প্রকার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সিন্ডিকেট পদ্ধতি বাতিল করে রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সব বাজার উন্মুক্ত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) নির্বাহী সদস্য রেদওয়ান খান বোরহান, মিনার ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে. এইচ গাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএন/এফআর