ডিপ্লোমা পেশেন্ট কেয়ারদের নার্সিং নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি
এসএনএসআর) আয়োজিত মানববন্ধন/ ছবি- ঢাকা পোস্ট
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের অধীনে ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন করছে নার্সেস সংগঠনগুলো। তারা দাবি জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এসএনএসআর) আয়োজিত মানববন্ধনে এ প্রতিবাদ ও দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমত আরা পারভিন বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। করোনা মহামারিতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন তারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দেশে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন একজন নার্স, যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। কিন্তু দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সের স্টুডেন্টসদের বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে নার্সিং লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই।
বিজ্ঞাপন
সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি) আইন ২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নার্সিং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা বিএনএমসির। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে এইচএসসি পাস করার পরে কাউন্সিল প্রণীত নির্দিষ্ট সিলেবাস ও কোর্স কারিকুলামে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং (স্নাতক), ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্স ও ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চলমান। যা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে স্বীকৃত।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬ এর ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী নার্সিং কাউন্সিলের আনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের নার্সিং কোর্স পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের ২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজেকে নার্স পরিচয় দিতে পারবে না এবং বিধান লঙ্ঘনে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি কামাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সে এসএসসি পাস করার পরে বাংলা মাধ্যমে ও ভিন্ন সিলেবাসে চার বছরের ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সে পড়ালেখা করানো হয়। যার সাথে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল স্বীকৃত নার্সিং শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্স থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সের নিবন্ধন চাচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, নার্সদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে নার্সিং ও টেকনোলোজি কোর্স বাতিল করা হয়। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় ডিপ্লোমা ইন পেমেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সে পড়ালেখা সম্পন্নকারীদের নার্সিংয়ের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এমন সিদ্ধান্ত বাতিলের অনুরোধ জানাই এবং ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সে পড়ালেখা সম্পন্নকারীদের নার্সিংয়ের নিবন্ধন না দিয়ে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি নামে তাদেরকে নিবন্ধন দেওয়ার অনুরোধ জানাই। কারণ ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সে পড়ালেখা সম্পন্নকারীদের নার্সিংয়ের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের নার্স সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই অবিলম্বে নার্সদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় দেশের নার্সরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এইচএন/এইচকে