প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে গণটিকা প্রয়োগ কার্যক্রম। ঢাকাসহ দেশের এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে একযোগে শুরু হবে এ কার্যক্রম। 

নিজেই টিকা নিয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনিসহ এদিন টিকা নেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-আমলা।

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর টিকা নেওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগামীকাল সকাল ১০টায় মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কোভিড টিকা গ্রহণ করে দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রমের সূচনা করবেন।

এর আগে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানান, রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম একযোগে শুরু হচ্ছে। কার্যক্রমের প্রথম দিনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী টিকা নেবেন।

মন্ত্রী-আমলারা কোন কেন্দ্রে টিকা নেবেন
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকা নেবেন। তারপর সেখানে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিন্স) ও হাসপাতালে টিকা নেবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন টিকা নেবেন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য ডিজি বলেন, বিভিন্ন জেলায় এবং বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতারা এবং স্থানীয় যেসব গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন তারা ওইসব কেন্দ্রে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য তারা নিজেরা টিকা নেবেন ও কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন।

দেশের সব টিকাকেন্দ্র প্রস্তুত
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, দেশজুড়ে রোববার সকাল ৯টায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চলবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। তবে কাল যেহেতু টিকাদান শুরু হচ্ছে, তাই এই সময় পরিবর্তন হতে পারে।

তিনি বলেন, শুরুর দিনে সারাদেশে এক হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এজন্য ২ হাজার ৪০২ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজধানীর ৫০টি স্থানে টিকাদান হবে। এছাড়া সারাদেশের ৯৫৯টি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ যেসব কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেখা হয়েছে, সব কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতি ভালো আছে। আমরা আশা করছি, কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই টিকাদানের কাজ শুরু করতে পারব।

প্রস্তুতির ঘাটতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু কিছু ছোট কেন্দ্রে বিশেষত মাতৃসদন, শিশু কেন্দ্রগুলোতে আমাদের কিছুটা প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। এটা আর সকালের কথা। আশা করি সময়ের ব্যবধানে তার উন্নতি হয়েছে। আমরা এখানে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং সব কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারপর যেখানে যে সমস্যা আছে আমরা এখান থেকে সমাধান করার চেষ্টা করব।

রাতেই এসএমএস পাবেন টিকা গ্রহীতারা
প্রথম দিনের টিকা নেওয়ার বিষয়ে যারা এখনও কোনো বার্তা বা এসএমএস পাননি, রাতেই তাদেরকে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে সারাদেশে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে প্রথম দিনে যারা টিকা নেবেন, তাদের অনেকেই এখনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো বার্তা বা এসএমএস পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

টিকা নিতে ‘সুরক্ষা’য় নিবন্ধন প্রায় চার লাখ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত নিবন্ধনের এ সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৬ হাজার ২৬৭ জন। একদিনের ব্যবধানে সে সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সুরক্ষা ওয়েবসাইটে দ্রুতই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে। ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার জন টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন। প্রথম দফায় দেশে যে ৫৬৭ জন টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন। সুতরাং টিকা নিয়ে অপপ্রচারে কান না দিয়ে, সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনেক সাংবাদিক নিবন্ধন করতে পারছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, যেসব সাংবাদিক আমাদের কাছে তালিকা দিয়েছেন তারা নিবন্ধন করতে পারছেন। পর্যায়ক্রমে সবাই নিবন্ধন করতে পারবেন। আমরা সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে নাম ও এনআইডি নম্বরের তালিকা চেয়েছি। অনেকেই দিয়েছেন, কেউ কেউ এখনও দিচ্ছেন।

টিআই/জেডএস