করোনার টিকা নিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম | ছবি- ঢাকা পোস্ট

করোনা প্রতিষেধক টিকা নিয়ে কোনো ধরনের অসুস্থবোধ করছেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাঠে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নেন ডিএমপি কমিশনার। টিকা গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। করোনা যুদ্ধে ডিএমপির ২৭ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও, বিশেষ করে আমাদের নিচের স্তরের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংশয় ছিল করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। সংশয় দূর করার জন্য ডিএমপির সিনিয়র কমান্ডসহ (ডিএমপি কমিশনারসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারগণ আজ সবার সামনে করোনার টিকা নিয়েছেন। যাতে ভীতি কেটে যায়।

করোনার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তো আমরা কেউই টিকা নিতাম না

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম

করোনার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তো আমরা কেউই টিকা নিতাম না— বলেন ডিএমপি কমিশনার।

‘করোনার টিকা নিয়ে অসুস্থবোধ করেছেন না’ উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আমরা কেউই অসুস্থ বোধ করছি না। টিকা নেওয়ার আগে অনেকে বলেছেন, স্যার ১০ থেকে ১৫ মিনিট মাথা ঘুরতে পারে। আসলে এটা মানসিক বিষয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে কিছুই হবে না। আর চার-পাঁচটা টিকার মতোই এই টিকা।

টিকা নেওয়ার পর অন্যকেও টিকা নিতে উৎসাহ দেখান ডিএমপি কমিশনার | ছবি- ঢাকা পোস্ট

তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, আপনারাও টিকা নেন। কারণ করোনা একটি প্রাণঘাতী রোগ। এটা থেকে বাঁচতে আমাদের টিকা নেওয়া জরুরি। বিজ্ঞানীরা করোনা প্রতিরোধের একটি ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছেন, তাহলে সেটি আমরা কেন নেব না? পৃথিবীর ২০-২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি দেশ, যারা করোনার টিকা পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় এই অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে আমরা রয়েছি। আমার মনে হয়, আমরা সবাই নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় টিকা নিতে পারি। এখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো ভয় নেই।’

আসলে এটা মানসিক বিষয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে কিছুই হবে না। আর চার-পাঁচটা টিকার মতোই এই টিকা

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম

‘ডিএমপির প্রায় আট হাজার পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। পর্যায়ক্রমে বাকি সদস্যরাও রেজিস্ট্রেশন করছেন। প্রতিদিন ডিএমপির ৪০০ পুলিশ সদস্য টিকা গ্রহণ করবেন। এই ৪০০ জনের তবে সবাই যে একসঙ্গে টিকা নেবেন, এরকম নয়। অনেকে হয়তো ভাববেন যে আমি এক সপ্তাহ পরে নেই, এরকমও হতে পারে।’

ডিএমপির প্রায় আট হাজার পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। পর্যায়ক্রমে বাকি সদস্যরাও রেজিস্ট্রেশন করছেন। প্রতিদিন ডিএমপির ৪০০ পুলিশ সদস্য টিকা গ্রহণ করবেন

এ সময় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায় ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তারসহ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনাররা টিকা নেন।

রোববার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর মধ্যে দিয়ে দেশের ১ হাজার ৫টি কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলো।

এ সময় তিনি বলেন, আজ সারাদেশে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। সারাদেশের ১ হাজার ৫টি কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আজকে আমিসহ আরও অনেকেই টিকা নেব। করোনার শুরুতে মাত্র একটি ল্যাব ছিল বাংলাদেশে। সেখানে ২০০টি ল্যাব এমনি এমনি তৈরি হয়ে যায়নি। ৩৫টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছিল, আমরা ৯০টি নতুন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এনেছি। অনেকে বলেছিলেন ভেন্টিলেটর লাগবে। কিন্তু এখন সব ভেন্টিলেটর খালি পড়ে রয়েছে। দরকার ছিল সেন্ট্রাল হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা। আমরা যখন এটি জানলাম তখন লকডাউন থাকা অবস্থায় নিয়ে এসেছি কয়েক হাজার হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। ফলে আমাদের মৃত্যুহার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশব্যাপী করোনা টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে ঢাকার ৫০টি হাসপাতালে ৫০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২০৪টি দল ঢাকার টিকাদান পরিচালনা করবে। এছাড়া, বিভিন্ন জেলার ৯৫৫টি হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে মোট দুই হাজার ১৯৬টি দল কাজ করছে।

এমএসি/এমএআর/