ছবি : সংগৃহীত

করোনা কীভাবে গোটা দেশকে স্থবির করে দিয়েছিল তা আমরা সবাই জানি, বিশেষত সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের জীবন। করোনার প্রথম ঢেউয়ের কারণে দেশে প্রথমবারের মতো লকডাউন কার্যকর করা হয় ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে। তখন থেকেই প্রকৃতপক্ষে এক প্রকারে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা, কিন্তু আবেদন গ্রহণ চলছিল।

পুরো বছরটাই শেষ হয়ে যায় ঐ লকডাউনের জন্য। ২০২১ সালের মার্চের শুরুর দিকে প্রকোপ কিছুটা কমে। কিছু কিছু পরীক্ষার নোটিশ হলেও ১৯ মার্চে ৪১তম বিসিএস আর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পর মার্চের শেষের দিকে আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয় এবং এপ্রিলের ৫ তারিখ থেকে আবার লকডাউন শুরু হয়ে সেটা শাটডাউন পর্যন্ত গড়ায়

অক্টোবরের মাঝামাঝিতে পরীক্ষা গ্রহণ আবারও ধীর গতিতে শুরু হয় এবং ২৯ অক্টোবর ৪১তম প্রিলির মাধ্যমে চাকরির নতুন সম্ভাবনা শুরু হয়। দীর্ঘ সময় সব ধরনের চাকরির পরীক্ষাই স্থগিত ছিল। আর পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ না হওয়ায় নতুন সার্কুলার আর প্রকাশিত হয়নি বা বিলম্বিত হয়েছে।

করোনায় প্রায় দীর্ঘ ২ বছরের স্থবিরতায় করোনার শুরুতে যাদের বয়স ছিল ২৮, তাদের বয়স এখন ৩০ এর বেশি। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে পরবর্তী দীর্ঘ ২ বছরে করোনার কারণে অনেকেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের যোগ্যতা হারিয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদিও বয়সের একটা প্রণোদনা (২১ মাসের বয়স) দিয়েছিল তবে সেটাও কতটা ভাবনা চিন্তা করে দেওয়া হয়েছে তা দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে।

শুধু মূল দিকটা লক্ষ্য করেলেই ব্যাপার স্পষ্ট হয়। প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয় ১৯ অক্টোবর ২০২১। যেখানে বলা হয়, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যেন সর্বোচ্চ ২৫ মার্চ ২০২০ ধরা হয় এবং সেই তারিখ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। এই ২১ মাসের পুরো ছাড় তারাই পেয়েছে যাদের বয়স ২৬ মার্চ ২০২০ এই তারিখে শেষ হয়ে গিয়েছিল।

করোনার জন্য সবচেয়ে বেশি তারাই উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তারা পেলেও ভালোভাবে তা উপভোগ করতে পারেনি কারণ প্রজ্ঞাপন হওয়ার তারিখ ছিল ১৯ অক্টোবর ২০২১।

প্রজ্ঞাপন দেরিতে হওয়ায় বেশকিছু সার্কুলার হাত থেকে বেড়িয়ে যায়। যেমন বেড়িয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার জেনারেল ও অফিসার ক্যাশের সার্কুলার । কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পুনরায় সেই সার্কুলার প্রকাশ করে যারা আবেদন করতে পারেনি তাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়।

সেই হিসেবে যাদের বয়স ২০২১ সালের শেষের দিকে শেষ হয়েছে তারা কোনো ধরনের বয়সের ছাড় পায়নি। যদি কারোও বয়স ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ৩০ পূর্ণ হয় তবে সেই মানুষ বয়স ছাড় পেয়েছে মাত্র ১ দিন।

প্রকৃতপক্ষে তাই এই বয়সসীমার মাঝে অবস্থানকারীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর পাননি, বরং পেয়েছেন মোটে ২৮ বছর। এই পরিস্থিতি নিয়ে গত ৫ জুন আমরা ২৮-২৯ বছর বয়সীদের একটি প্রতিনিধি দল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলি। প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেন তিনি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে ছয় কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করেন ছয় কোটি আট লাখ নারী-পুরুষ। অর্থাৎ ২৭ লাখ মানুষ কোনো কাজ করেন না, তারা বেকার। আর শতাংশ হিসাবে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার চার দশমিক দুই শতাংশ।

২৯ জানুয়ারি ২০২১-এ প্রকাশিত ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সারাদেশে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে।

এছাড়া ২০১৯ সালে মোট ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দেয় এবং তাদের মধ্যে নয় লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন পাস করে। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পাস করে উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে।

সেই হিসাবে প্রতিবছর যদি ১০ লাখ নতুন চাকরিপ্রার্থী চাকরি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তাহলে একই বছর আরও ১০ লাখের কাছাকাছি সংখ্যক প্রার্থীর আবেদনের বয়স শেষ হয়।

করোনা মহামারির কারণে এই বিশাল সংখ্যক প্রার্থী আবেদনের তেমন একটা সুযোগই পাননি। তাদের কথা ভাববে কী কেউ!

জাহিদ হাসান ।। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়