ছবি : সংগৃহীত

১.

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ঈদের দিনও যেসব মিডিয়া খোলা থাকে সেরকম একটি হাউজের ঘটনা। এসব বিশেষ দিনে যারা ডিউটি করেন তাদের জন্য অফিস সাধারণত ভালো খাবারের আয়োজন রাখে। কিন্তু দেখা গেল সকালের শিফটে যারা অফিসে এসেছেন, তাদের কয়েকজনের নাস্তা কম পড়েছে।

একটু ভেবে দেখেন-যেদিন ঘরে ঘরে ভালো খাবারের বন্যা বয়ে যায় সেদিন সকালে কয়েকজন খাবারের সংকটের মুখোমুখি হলো। শেষ পর্যন্ত অফিসের কাছে একজনের বাসায় তাদের নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। অথচ তারা সবাই সকালে বের হওয়ার সময় তাদের বাসায় ভালো ভালো খাবার রান্না হচ্ছে বলে দেখে এসেছে।

২.

ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে প্রায় সব মিডিয়ায় হেডলাইন দেখা যায়- নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। এই টানটা কত তীব্র তা তো নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। একটা উদাহরণই যথেষ্ট। ট্রেনের টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে টানা তিন চারদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা।

পৃথিবীর  আর কোথাও আপনি এটা দেখবেন না। টিকেট পান বা না পান শেষ পর্যন্ত তারা কোনো না কোনোভাবে বাড়িতে ঠিকই পৌঁছান। কিন্তু একটা শ্রেণি পারে না।

সাংবাদিকদের একটা অংশের কথা বলছি যারাও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যেতে চান কিন্তু জীবিকার বাধায় পারেন না, বরং ঈদযাত্রায়  মানুষের ঘরে ফেরার খবর পরিবেশন করতে গিয়ে তাদের দীর্ঘনিঃশ্বাস আরও দীর্ঘ হয়।

৩.

ঈদের দিন ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যেতে চায় কিন্তু তাদের সে শখ মাড়িয়ে সাংবাদিক বাবা অথবা মা'কে হয়তো অফিসে গিয়ে ঈদে ঘোরাঘুরির প্রতিবেদন তৈরি অথবা প্রচারের কাজটি করতে হয়।

৪.

টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বিজেসির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্প্রচার সম্মেলনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সবার প্রবৃদ্ধির খবর আমরা দেই, সংবাদ কর্মী ও সম্প্রচার শিল্পের প্রবৃদ্ধির খবর কী?

নিয়মিত বেতন নেই অনেক চ্যানেলে, ঝুঁকি ভাতা নেই, প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, নেই চাকরির সুরক্ষা। যেন এক ‘নেই রাজ্য’, তবে আছেও বেশ কিছু-  ডিজিটাল আইনে মামলা আছে, আছে হামলা, সংসদে উত্থাপিত গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে আছে উদ্বেগ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে বেসরকারি সম্প্রচার শিল্পের ২২ বছরে দাঁড়িয়েও এমন পরিস্থিতি। সাংবাদিকতা এরকমই একটি অনিশ্চিত পেশা, যার আবার পদে পদে আছে ত্যাগ স্বীকারের মতো ‘বোনাস’।

৫.

যখন শুধু পত্রিকা ছিল তখন বাড়ি যেতে না পারার কষ্টটা এমন ছিল না। কারণ, ঈদের সময় পত্রিকা বন্ধ থাকতো, এখনও থাকে। কিন্তু পত্রিকার অনলাইন ভার্সন অথবা অন্যান্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং বেসরকারি টেলিভিশন, এসব মিডিয়া কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ থাকে না।

দর্শক-শ্রোতাদের তথ্য জানাতে বা  বিনোদন যোগাতে এরা নিজেরা থাকে বিনোদনবঞ্চিত। নিউজপেপারে দীর্ঘদিন থাকার পর টেলিভিশনে কাজ করতে এসে জানলাম এখানে দুই ঈদের যেকোনো এক ঈদে ছুটি পাওয়া যাবে। যেহেতু টিভি কখনো  বন্ধ থাকে না, তাই এক গ্রুপ রোজার ঈদে আরেক গ্রুপ কোরবানি ঈদে ছুটি পায়।

৬.

যেবার ছুটি মেলে না, বাড়ি যাওয়া হয় না, সেবার আরেকটা ব্যাপার হয়- যে ঈদে আমরা অফিস করি সেদিন সহকর্মীদের সঙ্গে নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলি,  তারপর ‘অফিস আমাদের দ্বিতীয় পরিবার’- এরকম কিছু লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ভালো আছি দেখানোর চেষ্টা করি।

রেজোয়ান হক ।। বার্তা প্রধান, মাছরাঙা টিভি