ছবি : সংগৃহীত

রাজনৈতিক নেতাদের জন্মদিন ঘটা করে পালনের রেওয়াজ ছিল না এই দেশে। ১৯৯১ সালে বিএনপি নির্বাচনে জেতার পর হঠাৎ করেই জানা গেল দলের প্রধান খালেদা জিয়ার জন্মদিন নাকি ১৫ আগস্ট, যে দিনটি বাঙালির শোকের দিন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হারানোর দিন।

এই তারিখ নিয়ে কথা কম হয়নি। এখন নতুন ফ্যাশন রাজনৈতিক নেতা নেত্রী ও সেলেব্রিটিদের জন্মদিন ঘটা করে পালন করা। পরিবারের সদস্য, দলীয় সমর্থক সকলে মিলে নেতা বা নেত্রীর জন্মদিন বেশ ঘটা করে পালন করছেন।

বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার জন্মদিন আজ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৫৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

আরও পড়ুন : শেখ রেহানা : এক দুঃখিনী রাজকন্যার গল্প 

প্রধানমন্ত্রীর বোন, জাতির পিতার কন্যা, অথচ রাজনীতিতে নেই শেখ রেহানা। সরাসরি রাজনীতিতে কখনো আসেননি তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে ‘ছোট আপা’ হিসেবে পরিচিত শেখ রেহানা বরাবরই নিভৃতচারী।

শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বড় ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি। বড় মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ব্রিটেনের লেবার পার্টি থেকে পরপর দুই বারের নির্বাচিত পার্লামেন্ট মেম্বার। আর ছোট মেয়ে আজমিরা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইজারে কর্মরত। ছোট করে বললে এই হলো তার পরিচিতি।

একজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। একদম সাদাসিধে একজন নারী। চরিত্রে অহংকার প্রতিফলিত হয়, এমন কথা শত্রুও বলবে না কখনো...

শেখ রেহানা নিজে আশৈশব পালিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, যে আদর্শে জন্মদিন পালনের চর্চাটা গৃহেই ছিল, ঘটা করে করার রেওয়াজ ছিল না। কারণ বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। গরিব অসহায় মানুষের কথা বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় সবসময় ছিল। ফলে তার সন্তানেরা কেমন হবে সেটাও অনুমেয়।

আজ শেখ রেহানার জন্মদিনে তাকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই। নিশ্চয়ই শুভেচ্ছা জানিয়ে আশীর্বাদ করবেন বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। একজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। একদম সাদাসিধে একজন নারী। চরিত্রে অহংকার প্রতিফলিত হয়, এমন কথা শত্রুও বলবে না কখনো। কোথাও তার সরব উপস্থিতি নেই, দলীয় বা অন্য কোনো পদ-পদবিতেও নেই।

তবে কি শেখ রেহানা অনেকটা তার মায়ের মতো করে ভূমিকা রাখছেন রাজনীতিতে? সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে? মা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন সাহস ও অনুপ্রেরণা। যার অনুপ্রেরণায় শেখ মুজিব হতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

আরও পড়ুন : রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ! 

আমরা ধারণা করতে পারি, এখন পর্দার অন্তরালে বড় বোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা, পরামর্শ আর সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন শেখ রেহানা।

১৯৭৫-এরপর বৈরী সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশ বিভূঁইয়ে থেকেছেন, লড়াই করে জীবন পার করেছেন। মানুষের সংগ্রাম আর ত্যাগকে সাথে করে একুশ বছর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালে বাংলাদেশের মানুষ আবার তাকে ক্ষমতায় এনেছে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে এবং টানা তৃতীয়বারের মতো এখন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ১৯৯৬ কিংবা বর্তমান সময় কখনোই শেখ রেহানাকে ক্ষমতা কাঠামোর ভেতরে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি।   

শেখ রেহানা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি আশা-ভরসার স্থান। বিশেষ করে শেখ রেহানার কথা বেশি উচ্চারিত হয় ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গ এলে...

শেখ হাসিনার কাছে একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা বড় সম্পদ, সবচেয়ে আপনজন। বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি অচল, তাকে ছাড়া তিনি পরিপূর্ণ নন এবং সেটাই স্বাভাবিক।

শেখ রেহানা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি আশা-ভরসার স্থান। বিশেষ করে শেখ রেহানার কথা বেশি উচ্চারিত হয় ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গ এলে।

সেই সময় আওয়ামী লীগকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সাথে মিলে শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে শেখ রেহানা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

আরও পড়ুন : তরণী চলছে শুভ লক্ষ্যে 

রাজনীতি মানুষকে দুটি বিশেষ দিকে আকৃষ্ট করে। এক—পদ, প্রতিষ্ঠা, সুযোগ; দুই—কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা। এগুলো থেকে সচেতনভাবে নিজেকে দূরে রাখতে পারা খুব কঠিন কাজ এবং সেটা শেখ রেহানা পেরেছেন।

সন্তানদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন, তারা দেশে বিদেশ সুপ্রতিষ্ঠিত আর নিজে স্বদেশে শেখ হাসিনার পাশে থাকছেন নিশঙ্ক চিত্তে, নিরহংকারী হয়ে।

১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন দুই বোনই, কিন্তু অসীম সাহস এবং সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে দুজনেই সন্তানদের সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জন্মদিনে শেখ রেহানাকে আবারও জানাই শুভেচ্ছা। সুস্থ ও সুন্দর কাটুক তার আগামী দিনগুলো।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ।। প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন