ছবি : সংগৃহীত

ব্যাঙ আর শিশুদের খেলার গল্পটি আপনাদের সবারই জানা। জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকটি শিশু খেলা করছিল। তারা জলাশয়ে ঢিল ছুঁড়ছিল। তাতে বিপাকে পড়ে যায় জলাশয়ে থাকা ব্যাঙের দল। এক পর্যায়ে একটি বয়স্ক ব্যাঙ সাহস করে এগিয়ে এসে শিশুদের বলে, তোমাদের জন্য যেটা খেলা, আমাদের জন্য সেটা মৃত্যু।

বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এখন খেলা চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতির এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’। আওয়ামী লীগের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান স্লোগানটি শুরু করলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে ‘খেলা হবে’।

তবে ইদানীং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্লোগানকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তিনি প্রায় নিয়মিতই ‘খেলা হবে’ বলে বিএনপিকে হুমকি দিচ্ছেন। বিএনপিও পাল্টা খেলার হুমকি দিচ্ছে।

আরও পড়ুন : ১০ ডিসেম্বর : কী খেলা হবে? 

দুই পক্ষের এসব পাল্টাপাল্টি খেলার হুমকিতে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি হয়েছে সাধারণ মানুষের। সরকারও মামলা-হামলায় বিরোধী দলকে ঠেকাতে প্রস্তুত।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি সারাদেশ ঘুরে এখন ঢাকায়। নানা বাধা-বিঘ্ন সত্ত্বেও ঢাকার বাইরের বিভাগীয় সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণই হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন দারুণ চাঙা এবং আত্মবিশ্বাসী।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন প্রবল চাপে। এই সময়ে রাজপথে সংঘাত, উত্তেজনা অর্থনীতিকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে....

সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারা এখন ঢাকায়। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সাথে এসেছে উত্তেজনা, শঙ্কা। সমাবেশের তিনদিন আগেই নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মকবুল আহমেদের। বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও এই মকবুল আহমেদের ভাগ্য বদলাবে না। রাজনীতির খেলায় তারা জীবন দিয়েই যাবেন।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের বিরোধিতা করার অধিকার সবার আছে। চলাফেরা, সংগঠন করা, সমাবেশ করার অধিকারও সংবিধানেই স্বীকৃত। কিন্তু সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’

আরও পড়ুন : দলাদলি নয় গলাগলি হোক 

জনসভা করার অধিকার সংবিধানে থাকলেও তা নিঃশর্ত নয়। ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে’ই জনসভা করতে হবে। এখন সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিলেও তারা গায়ের জোরে নয়াপল্টনেই করতে চাইছে।

বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিলে সরকারের কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে গো ধরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। তাতে তাদের ক্ষতিই হবে বেশি।

সরকার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের ব্যাপারে যতটুকু ছাড় দিয়েছে, সরকারকে আবার কঠোর অবস্থানে নিয়ে গেলে বিএনপি মামলা-হামলায় পর্যুদস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি এই মুহূর্তে বিএনপির নেই। বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে দেশজুড়ে যে চাঞ্চল্য বিএনপি সৃষ্টি করতে পেরেছিল, ঢাকার উত্তেজনায় তা হারিয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন : আন্দোলনের ডামাডোলে থাকুক শান্তির বারতা 

সরকারের অনুমতি নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করে বিএনপির আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে যাওয়া উচিত ছিল। তার আগেই তারা সরকারের সাথে সংঘর্ষে জড়ালো।

রাজনীতিও একটা খেলার মতো। খেলার জন্য যেমন সমতল মাঠ মানে সবার জন্য সমান সুযোগ দরকার। রাজনীতিতেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে সবার জন্য সমান সুযোগ জরুরি।

বিএনপি কী করবে, কখন আন্দোলন করবে; এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। তবে দুই দলের খেলায় সাধারণ মানুষের মরণদশা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুবাদে এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুণ মোমেন্টাম পেয়েছিল।

করোনার ধাক্কা সামলানোর আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন প্রবল চাপে। এই সময়ে রাজপথে সংঘাত, উত্তেজনা অর্থনীতিকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

আরও পড়ুন : রাজনীতি কি মরণ খেলা? 

বলছিলাম খেলার কথা। বাংলাদেশের মানুষ এখন রাজনীতির চেয়েও বেশি মেতে আছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। সব খেলারই কিছু নিয়ম থাকে। এবারের বিশ্বকাপে যেমন ভিডিও দেখে কঠোরভাবে খেলার নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। রেফারির চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। নিয়মের বাইরে কেউ কিছু করলে রেফারি তাকে শাস্তি দেন।

রাজনীতিও একটা খেলার মতো। খেলার জন্য যেমন সমতল মাঠ মানে সবার জন্য সমান সুযোগ দরকার। রাজনীতিতেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে সবার জন্য সমান সুযোগ জরুরি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সবসময় বাড়তি সুবিধা পায় বা নেয়। তাদের সাথে পুলিশ থাকে, প্রশাসন থাকে। তাই বিরোধী দল একটু কোণঠাসা থাকে সবসময়।

তবে মাঠের খেলার মতো রাজনীতির খেলাতেও নিয়ম মানতে হবে। কোনো ফাউল করা যাবে না। কেউ ফাউল করলে রেফারি যেন শাস্তি দিতে পারে। মাঠের খেলার মতো রাজনীতিতে আমরা ফেয়ার প্লে চাই।

প্রভাষ আমিন ।। বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ