ছবি : সংগৃহীত

বাঙালি জাতি স্বাধীনতার পঞ্চাশ অতিক্রম করেছে। তা বড় আনন্দের বিষয়। একটি জাতির স্বাধীনতা তার ইতিহাসে যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনার। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।

তাই তো কবি শামসুর রাহমান লিখে গেছেন, স্বাধীনতা তুমি, রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি, কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো, মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা।

১৯৭১ সালের এই দিনের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দিয়েছিলেন—হানাদারদের কবল থেকে মাতৃভূমি মুক্ত করার। ওই ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় দেশকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। যেদিন শুরু হয়েছিল এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধ।

আরও পড়ুন >>> তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ? 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সেই রাতের অন্ধকারও হার মানিয়েছিল।

ভয়াল সেই রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি বাহিনী।

বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হবেন আগে থেকেই জানতেন তাই গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে দেশবাসীকে নির্দেশ দেন।

তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সেই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি।

আরও পড়ুন >>> বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সত্যিই বেদনাদায়ক 

পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভূমি হানাদারমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালিরা যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। বাঙালি লাভ করে চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

দীর্ঘ ৯ মাস কিংবা ২৬৬ দিনের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় একটি নতুন রাষ্ট্র। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড- সোনার বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন >>> সম্প্রীতি কোথায়?

স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার। তারা পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মিলে দেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করেছে।

সেই আলবদর, আল শামস বাহিনীর রাজাকারের বংশধররা এখনো বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা। আর এখন সেই পরাজিত শক্তির আধুনিক রূপ বিএনপি-জামায়াত।

দেশবিরোধী শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে তারাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বারবার এদেশ পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে।

এখনো তাদের ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। কিন্তু জাতির পিতার অর্জিত স্বাধীন বাংলা তারই সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে স্বপ্নে সোনার বাংলা হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক, সামাজিক খাতসহ সামগ্রিকভাবেই দেশ এগিয়েছে অনেকদূর।

আরও পড়ুন >>> রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!

বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য এই উন্নয়ন, অগ্রগতি বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মূলত এটিই ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ‘জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত আমরা।

বঙ্গবন্ধু দেশকে ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন করেছেন আর তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে এখন উদীয়মান সমৃদ্ধির দেশ।

ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলি ।। শিক্ষাবিদ ও সাবেক সদস্য,  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন