ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথিতযশা উদ্যোক্তা, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রেনার্স (বিএফডব্লিউই)-এর সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান। তিনি ৫ এপ্রিল ২০২৩ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৮০ সালে তিনি আর. আর. কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কৃষি খাতে তার ব্যবসায়িক কাজের সূচনা করেন।

তিনি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও একইসঙ্গে বোর্ড মেম্বার হিসেবে ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এমআইডিএএস, বিএফএফ, এমআরডিআই, স্মাইলিং সান, হেলথ২১-এর মতো সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। 
 
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাইডাসের একেবারে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এর কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে মিলে পরবর্তীতে তিনি গড়ে তোলেন মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড।

আরও পড়ুন >>> নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন 

নারী উদ্যোক্তাদের বিনা বন্ধকিতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণদান, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ‘মিনি মার্ট’ নামক দোকান, উইমেন টু উইমেন সাপোর্ট প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার যাত্রা শুরু করেন রোকেয়া আফজাল রহমান।

নারী উদ্যোক্তাদের বিনা বন্ধকিতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণদান, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ‘মিনি মার্ট’ নামক দোকান, উইমেন টু উইমেন সাপোর্ট প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার যাত্রা শুরু করেন রোকেয়া আফজাল রহমান।

তার সাথে আমার পরিচয় ২০১৭ সালে। নারী উদ্যোক্তাদের এক অনুষ্ঠানে। উইমেন ইন ডিজিটাল-এর প্রতিষ্ঠাতা আছিয়া নিলা’র আয়োজনে ‘Digital Innovation Challenge for Women’ নামক অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন গেস্ট অফ অনার হয়ে।

তার সম্পর্কে আগেই জানতাম। এই প্রথম তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। কী চমৎকার এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব তার। কী সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন। উচ্চারণগুলো খুবই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন >>> নারীর চ্যালেঞ্জ, নারীর অগ্রযাত্রা 

অনুষ্ঠানে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি আমার। কারণ সবাই তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম। আমি দেখেছি উনি নিলা’কে অনেক সাপোর্ট করেছেন ওই সময়। নারীদের কাজে দেখলে উনি খুব খুশি হতেন।

পরবর্তীতে অন্যান্য অনেক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে, অল্প স্বল্প কথা হতো। করোনার সময়ে আমি তখন নারীদের নিয়ে কাজ করছি। নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ছিল এর লক্ষ্য।

একদিন উই-এর উপদেষ্টা কবির সাকিব আমাকে কল দিলেন। বললেন, মাইডাসের চেয়ারম্যান আমার সাথে কথা বলতে চান। আমি সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলাম। তখন তিনি ফোন কনফারেন্সে আমার সাথে যুক্ত করে দিলেন।

রোকেয়া আফজাল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কথা জানলেন আমার কাছ থেকে। কীভাবে নারীদের সাহায্য করছি, কীভাবে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করছি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন >>> উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা 

জানতে চাইলেন আমার গল্প, কেন শুরু করলাম। সব শুনে খুব খুশি হলেন। তারপর বললেন, আমি এত কাজ করেছি তিনি জানলেন না কেন? পরে আমি তাকে বললাম, আপা, আমি ই-ক্যাবে আছি জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে, আমি সেই নিশা। তখন তিনি আমাকে চিনতে পারলেন। বললেন, ‘ও আচ্ছা হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে চিনি। তুমি তো অনেক কাজ করে ফেলেছ।’

রোকেয়া আফজাল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কথা জানলেন আমার কাছ থেকে। কীভাবে নারীদের সাহায্য করছি, কীভাবে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করছি ইত্যাদি।

শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে তখন। তার মতো মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার আমার কাছে। তিনি তখন বলছিলেন যে, উদ্যোক্তাদের যদি ক্ষুদ্র লোনের দরকার হয়, তিনি আছেন সাহায্য করার জন্য।

রোকেয়া আফজাল চাইছিলেন নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ তিনি ‘উই’কে বরাদ্দ দেবেন। উই নারীদের লোন দেবে। কিন্তু উই-এর সেই লাইসেন্স নেই। যার কারণে আমরা এটা নিয়ে আর এগোতে পারিনি।

আরও পড়ুন >>> ই-কমার্স : বাংলাদেশে যে ব্যবসায়িক মডেল প্রচলিত 

ঋণ নিয়ে কাজ করার মানসিকতা বা স্থিরতা তখনো নারীদের মধ্যে তৈরি হয়নি। কারণ তারা তখন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম যে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে অর্থ সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করবো। আমার দুর্ভাগ্য তার সাথে আমার আর কাজ করা হলো না। 

২০ বছর ধরে রোকেয়া আফজাল দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কাজ করে আসছেন। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আমরা মনে করি, তার মৃত্যুতে নারী উদ্যোক্তারা একজন অভিভাবক হারালেন।

নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই–কমার্স ফোরাম (উই)