করোনায় প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর সংবাদ আসছে। সুস্থতার সাথে রমজানের রোজা রাখতে পারাও এখন সৌভাগ্য। যারা রোজা রাখার সৌভাগ্য পাবেন তাদের উচিত হবে রোজার দিনগুলো বিশেষ ইবাদতে থাকা।

মহামারি করোনায় সবার আয়-ব্যয়ের হিসেব পাল্টে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে অনেকে নিঃস্ব। অগণিত মানুষ চাকরিচ্যুত হচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও পড়ছে বিপাকে। অপরদিকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ রেখে অধিক মুনাফা অর্জন করছে। অভাবী মানুষেরও প্রত্যাশা থাকে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তারা নির্বিঘ্নে রমজান পালন করতে পারেন।

বিশ্বের অনেক দেশেই রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়। কিছু কিছু দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়েও দেওয়া হয় যেন রোজাদাররা নির্বিঘ্নে প্রশান্তি সহকারে সিয়াম সাধনার সুযোগ পান। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে মুনাফা করবেন তা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু রমজান মাসে ভোক্তাদের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অতি মুনাফা করবেন তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। দেখা যায় রমজান শুরুর আগে থেকে বাজারে যেন আগুন লেগে যায়। দ্রব্যমূল্যের দাম এতো বেড়ে যায় যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

বিশ্বের অনেক দেশেই রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়। কিছু কিছু দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়েও দেওয়া হয় যেন রোজাদাররা নির্বিঘ্নে প্রশান্তি সহকারে সিয়াম সাধনার সুযোগ পান। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে মুনাফা করবেন তা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু রমজান মাসে ভোক্তাদের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অতি মুনাফা করবেন তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

রোজার মাস এলেই দেখা যায়, ইফতার সমাগ্রীসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আচমকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে এসকল খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায় কিংবা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকে। ব্যতিক্রম কেবল রমজান মাসে। অধিক মুনাফালোভীরা তাদের গুদামে রমজান মাসের নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যদ্রব্য অবৈধ, অনৈতিকভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেও দেখা যায়। যদিও এদের সংখ্যা কম কিন্তু বাজার ব্যবস্থাকে এই কমসংখ্যক লোকই নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যতম সম্মানজনক কাজ। কিন্তু অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এটি নিষেধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে অস্বাভাবিক ও অধিক মূল্যে বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করে রাখাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুদদারি বলা হয়।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মজুদদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি; যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তাহলে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর যদি মূল্য বেড়ে যায় তাহলে আনন্দিত হয়’ (মিশকাত)।

মহানবী (সা.) আরও ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুদ করে রাখে সে বড় পাপী’ (মুসলিম)।

পণ্যসামগ্রী মজুদ করে দাম বৃদ্ধি অথবা অধিক মুনাফা করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে মজুদদারকে নিকৃষ্ট ও অভিশপ্ত বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুদদার হয় অভিশপ্ত।’ আরও বলা হয়েছে, ‘বিভ্রান্ত লোকই শুধু মজুদদারি করে’ (ইবনে মাজা)। মহানবী (সা.) মজুদদারকে কঠোর শাস্তি প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন, ‘যে মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যদ্রব্য চল্লিশ দিন যাবত মজুদ করে রাখবে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দিয়ে শাস্তি দিবেন’ (ইবনে মাজা)।

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যতম সম্মানজনক কাজ। কিন্তু অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এটি নিষেধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে অস্বাভাবিক ও অধিক মূল্যে বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করে রাখাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুদদারি বলা হয়।

তাই দ্রব্যমূল্য মজুদ রেখে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ। এই পাপ কাজ করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরদার করতে হবে। সেই সাথে ব্যবসায়ী ভাইদেরকে অবশ্যই রমজান মাসের মাহত্মকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা পবিত্র এ রমজান মাসেই মহানবী (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন।

রমজান আল্লাহকে লাভ করার বিশেষ এক মাস। পবিত্র এ মাসে মুমিন-মুত্তাকি বান্দারা আগের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত করে থাকেন কিন্তু এসব তখনই প্রশান্তিতে আমরা করতে পারবো, যখন আমাদের চারপাশ সুশৃঙ্খল থাকবে। সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহপ্রেমীকে পরিণত করে। মনে যদি শান্তি থাকে তাহলে ইবাদত-বন্দেগিতেও মন বসবে এবং প্রশান্তি লাভ করবো, এটাই স্বাভাবিক। তাই রমজানকে প্রশান্তিময় করার জন্য দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

মাহমুদ আহমদ ।। গবেষক ও কলামিস্ট