তাপমাত্রা দশের নিচে নামলে স্কুল বন্ধ হবে নাকি সতেরোর নিচে নামলে বন্ধ হবে, এই আলোচনায় ব্যস্ত সবাই। আর কিছু লোক চায়ের কাপের ধোয়া জুড়াচ্ছেন তাপমাত্রার এই নতুন তারতম্যের হিসাব মেলাতে।

জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা আর কপ ইত্যকার নানা জটিল বিষয়ে যখন সবার মনোযোগ, তখন আমজনতার আগ্রহ আর ভ্রুকুঞ্চন অন্য কারণে। শীত তো আর একা জেঁকে বসেনি, এর সাথে জেঁকে বসেছে নানা রোগবালাইও।

শীতের সাথে সাথে সঙ্গত কারণেই বেড়েছে সর্দি-কাশি আর ফুসফুসের রোগের প্রকোপ আর রোগীর সংখ্যাও। বেশি ভুগছেন তারাই যাদের বয়স অনেক কম কিংবা অনেক বেশি, অর্থাৎ শিশু আর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। আর সাথে যদি আগে থেকেই থেকে থাকে হাঁপানি কিংবা শ্বাসতন্ত্রের কোনো সমস্যা, তাহলে তো কথাই নেই।

এই শীতে রোগীর এইসব রোগ যাকে বলে পোয়াবারো। সাথে আবার উটকো ঝামেলা হিসেবে জুড়ে বসেছে কোভিড-১৯। সদ্যই আইইডিসিআর, বাংলাদেশে কোভিড পরিবারের সর্বশেষ সদস্য জেএন-১ এর আগমনী বার্তা জানান দিয়েছে। ভাগ্যিস কোভিডের জেএন-১ ধরনটি ডেল্টার মতো বিভীষিকাময় নয়, কিন্তু তাতে কী? 

 

যাদের আগেভাগেই আছে ফুসফুসের কোনো বড় রোগ, যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি ইত্যাদি, তাদের জন্য কোভিড পরিবারের এই সর্বকনিষ্ঠ সদস্যটিও তো যথেষ্টই উদ্বেগের।

ডেঙ্গু হয়তো এই শীতে ছুটিতে গেছে, কিন্তু আছে তো আরও অনেক কিছুই। শীতে বাড়ছে পেটের পীড়াও, বিশেষ করে শিশুদের ভোগান্তিটা একটু বেশিই। আর শিশুদের কথা যখন আসলো তখন শিশুদের নিউমোনিয়ার এই সময়টার যে বাড়াবাড়ি তা ভুলে গেলেও তো চলছে না।

যাদের আগেভাগেই আছে ফুসফুসের কোনো বড় রোগ, যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি ইত্যাদি, তাদের জন্য কোভিড পরিবারের এই সর্বকনিষ্ঠ সদস্যটিও তো যথেষ্টই উদ্বেগের।

প্যাসিভ স্মোকিংয়ের মতো শীতেরও আছে প্যাসিভ কিছু অ্যাফেক্ট, যার বাড়াবাড়িটা আবার অতিরিক্ত দেশের শীতপ্রবণ এলাকাগুলোয়, যেমন উত্তরাঞ্চলে একটু বেশি।  এই সময় অসচ্ছল মানুষগুলো শীত থেকে বাঁচতে আগুনে তাপ পোহায়, আর সেইখান থেকে মাঝে-সাজেই ঘটে যায় আগুনে দগ্ধ হওয়ার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলো।  যেসবের খবর আমরা এই শীতে দু-একদিন বাদে-বাদেই পত্রিকায় পড়ি আর টিভিতে-অনলাইনে দেখি।

রাজশাহীতে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ অর্ধশতাধিক। লালমনিরহাটে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।  সাথে এই শীতে অন্যান্য সব শীতের মতোই থাকছে কুয়াশার চাদরে ঢাকা আরও বেশি অনিরাপদ সড়ক-মহাসড়কগুলো, যার কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাগুলোও।

এই শীতে যখন রোগবালাইয়ের এত বেশি বাড়াবাড়ি, তখন শীতে শুধু শীত থেকে বাঁচার প্রস্তুতি নিলেই চলবে না, প্রস্তুতি থাকতে হবে রোগবালাই থেকে বেঁচে থাকারও। সুবিধাটা হচ্ছে এই দুই টার্গেট অর্জনের পথটা এক এবং অভিন্ন।

শীতে অপ্রয়োজনে, বিশেষ করে রাতের বেলায় ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরি না করা আর ঘরের ভেতরে-বাইরে ঠিকঠাক মতো গরম কাপড় পরিধান একেবারেই অত্যাবশ্যকীয়। তবে এই কথা বলা যত সহজ, বাস্তবে বাস্তবায়ন করাটা অনেকের জন্যই অতটা সহজ নয়।

খেজুর রসের বিষয়ে যে কথাটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এইবার কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া একদমই বারণ।  এই বিষয়ে জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

কারণ নিত্যপণ্যের দামের বাড়বাড়ন্ত এই সময়ে গরম কাপড় কেনার জন্য ঐ বাড়তি অর্থের সংস্থান করাটা তো অনেকের জন্যই কঠিন। এই ক্ষেত্রে আমরা যারা স্রষ্টার অশেষ কৃপায় অবস্থাবান, তাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক।

আমাদের এগিয়ে আসতে হবে আমাদের প্রতিবেশী, পরিচিত-অপরিচিত পিছিয়ে পড়া মানুষটির সাহায্যে, দাঁড়াতে হবে গরম কাপড়ের উপহার নিয়ে তার পাশে যাতে করে আপনি, আমি, ওরা - আমরা সবাই রোগবালাইকে হারিয়ে দিয়ে পিঠা-পুলি আর খেজুর রসের আমেজে আরও একটা শীতকাল ভালোয় ভালোয় উতরে যেতে পারি।

খেজুর রসের বিষয়ে যে কথাটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এইবার কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া একদমই বারণ।  এই বিষয়ে জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। কেউ কাঁচা রস খেতে চাইলে তা বিক্রি না করতে গাছি (খেজুরের রস সংগ্রহকারী) বা বিক্রেতাদের প্রতিও অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। খেজুরের রস খাওয়ার ফলে শরীরে নিপাহ ভাইরাস দানা বাঁধছে। শীত উপভোগ করতে হলে এই বারণ শুনতেই হবে।

আর সড়কে যখন নামবো স্টিয়ারিংটা আরেকটু সাবধানে ধরতে যেন ভুলে না যাই। এইসব বিষয় মাথায় রাখলে শীত উপভোগ সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।। ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ