রাস্তার ছোট একটা ব্যাপারকে টেনে এত বড় করে ফেলা হলো যে, সেটা শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে ঠেকল। আমরা পারিও বটে! তবে যতটা না কাজে তার চেয়ে বেশি অকাজে।

করোনা মহামারির ভয়ংকর চেহারায় ফিরে আসা এবং মৃত্যুর মিছিলের মধ্যেও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা কাদেরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মারামারি অব্যাহত আছে। তবে এটি শুধু মফস্বলের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তা আর বলা যাচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়েও এমন দেখা গেল।

ডাক্তারদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দায়ী করেছে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটকে আর পুলিশদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দায়ী করেছে ডাক্তারকে। সাধারণ নাগরিকদের কোনো সংগঠন নেই, তারা ফেসবুকেই প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকেন।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় এক নারী ডাক্তারের গাড়ি থামিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিয়ে যে তুলকালাম হলো তা নিয়ে ফেসবুকে ঝড় গেল দু’দিন ধরে। সেখানে কেউ এই নারীর পক্ষে, আবার কেউ প্রশাসনের লোকদের পক্ষ নেন। নির্মোহ থাকার চেষ্টা করে আমি একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেটিকেও কেউ কেউ পক্ষপাতদুষ্ট বলেছেন। হতেই পারে। ফেসবুকে আমরা যা খুশি তাই লিখতে পারি।

কিন্তু রাস্তার ছোট ঘটনাটিকে বড় করে তোলা এবং এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পর আশা করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কর্তৃপক্ষ বা মুরব্বিরা বিষয়টি মিটমাট করে নেবেন। কারণ সবাই যার যার জায়গা থেকে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু দেখা গেল দুই পক্ষের সমিতি, ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে।

ডাক্তারদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দায়ী করেছে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটকে আর পুলিশদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দায়ী করেছে ডাক্তারকে। সাধারণ নাগরিকদের কোনো সংগঠন নেই, তারা ফেসবুকেই প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলো সেসব পড়লে জানতে পারতেন মানুষ কী বলছে? যদি পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি সেটা তাদের জন্য সুখকর হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। করোনার এই পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রজাতন্ত্রের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে, ইগো বা ক্ষমতার দম্ভ থাকা উচিত নয়। সবাইকে দায়িত্বশীল হয়ে পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে।

সংগঠনগতভাবে পাল্টাপাল্টির এ বিষয়টি এক আইনজীবী মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত বলেছেন, ‘এটা অনভিপ্রেত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। করোনার এই পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রজাতন্ত্রের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে, ইগো বা ক্ষমতার দম্ভ থাকা উচিত নয়। সবাইকে দায়িত্বশীল হয়ে পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে।’

জানি না আদালতের এই বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের কিছু আসবে যাবে কি না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) অবশ্য সবাইকে উদ্দেশ্য করে কোনো বিবৃতি দেয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে নারী সহকর্মীকে রাস্তায় হেনস্থা করার প্রতিকার চেয়েছে, বলেছে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যার সভাপতি আবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার নিজেই।

এই লকডাউনে, বিশেষ করে মুভমেন্ট পাস চালু করার পর পুলিশ যে কখনো কখনো বাড়াবাড়ি করছে তার অন্তত দুটো ঘটনা তো ইতোমধ্যে প্রমাণিতই হয়েছে।

১. ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালের এক ডাক্তারকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করার পর ভুল বুঝতে পেরে তা ফেরত দিতে হয়েছে।
২. ফেনীতে রিকশা যাত্রী এক যুবকের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় ফেনী মডেল থানার এসআইসহ ৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। যেহেতু এ রকম ঘটনা ঘটছে তাই ঢাকার সর্বশেষ এবং তুমুল আলোচিত ঘটনাটির পরদিনই পুলিশ কমিশনার তার সহকর্মীর পক্ষ না নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করলে মানুষ খুশি হতো।

রাস্তার ঘটনাটি যতদূর গড়িয়েছে, ধরে নিলাম দুই পক্ষেরই বাড়াবাড়ি ছিল। তারপর তো তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বা বড়দের উচিৎ ছিল এটি আর যেন না বাড়ে সেজন্য মীমাংসা বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ এর সঙ্গে জড়িত সবাই সরকারি কর্মকর্তা এবং এখন রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে কাজ করার সময়। তা না করে তারা বরং আনুষ্ঠানিকভাবে একে অপরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিলেন। যা আসলেই বড়দের ছেলেমানুষি।

রেজোয়ান হক ।। হেড অব নিউজ, মাছরাঙা টিভি