মাত্র এক বছর! ঢাকা পোস্টের প্রথম বর্ষপূর্তির কথা শুনে এমনই বিস্ময় বোধ হলো আমার। যেন মনে হচ্ছে অনেক বছর ধরেই সংবাদমাধ্যমটি আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে খবর ও খবরের পেছনের খবর।

একটু ভেবে দেখলাম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের বস্তুনিষ্ঠ লেখা মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তাই সেই লেখা বিপুলসংখ্যক পাঠকের কাছে যেতে পেরেছে, শেয়ার হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, যা আমাদের সকলের চোখে পড়েছে, মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিভিন্ন ইস্যুতে তাই বারবার পড়েছি ঢাকা পোস্টের লেখা। নিজেও লিখেছি বিভিন্ন সময়।  সে কারণেই হয়তো বা আমার এমন একটি ধারণা জন্মেছে যে, ঢাকা পোস্ট আমাদের মাঝে আছে বেশ অনেক দিন ধরে! বেশ বিস্মিত হয়েছি জেনে যে, তাদের প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। বিস্ময়ের সঙ্গে গভীর আনন্দ ও সন্তুষ্টি নিয়ে আজ তাই ঢাকা পোস্টকে জানাতে চাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা।

কাগজে ছাপা সংবাদপত্র হোক আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল হোক, পাঠক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পড়তে চায়। চটকদার হলুদ সাংবাদিকতায় মুহূর্তের মনোযোগ অর্জন সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের আস্থা অর্জন ও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা পোস্ট। সেজন্য এ অল্প সময়ে তাদের এত ব্যাপ্তি ও পরিচিতি

মাত্র এক বছরে এই বিস্তৃতি নিশ্চিতভাবেই প্রশংসার যোগ্য। বাস্তব ও ভার্চুয়াল মিলিয়ে আজকালকার দুনিয়া প্রচণ্ড দ্রুত গতির। অসম্ভব দ্রুত গতির পরিবর্তন সর্বত্র। মোবাইল ফোনের টাচ স্ক্রিনে স্ক্রল করার মতো মিলি সেকেন্ডে পাল্টে যায় পৃথিবীর দৃষ্টিপট। মানুষের মনোযোগও যেন হারিয়েছে স্থিতি। ক্ষণিকের জন্য তাকাই, শুনি; এরপরই অন্য কিছুতে চলে যায় চোখ। এমন ঠুনকো মনোযোগের মানসে নিজেকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। ঢাকা পোস্ট খুব অল্প সময়ে সেটা অর্জন করতে পেরেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

এ অর্জনের জন্য সবচেয়ে বড় গুণ যেটা, তা হলো বস্তুনিষ্ঠতা। কাগজে ছাপা সংবাদপত্র হোক আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল হোক, পাঠক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পড়তে চায়। চটকদার হলুদ সাংবাদিকতায় মুহূর্তের মনোযোগ অর্জন সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের আস্থা অর্জন ও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা পোস্ট। সেজন্য এ অল্প সময়ে তাদের এত ব্যাপ্তি ও পরিচিতি।

অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজের যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এ দেশের মানুষ একাত্তরে, তা ধারণ করে আছে ঢাকা পোস্ট। তাই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় তাদের লেখায়। গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের এটাও একটি বড় কারণ

এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় শামিল পাঠক শ্রেণির কাছে ঢাকা পোস্ট একটি গ্রহণযোগ্য নিউজ পোর্টাল। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান এ গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করেছে। একইসঙ্গে অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজের যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এ দেশের মানুষ একাত্তরে, তা ধারণ করে আছে ঢাকা পোস্ট। তাই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় তাদের লেখায়। গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের এটাও একটি বড় কারণ।

আমার নিজের কিছু লেখাও প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা পোস্টে। পাঠকের কাছে সেসব লেখা দ্রুত পৌঁছে গেছে। যেকোনো লেখার ফিডব্যাক পাওয়া যায় দ্রুত। এটা বাড়তি সুবিধা। লেখার বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই যেমন বুদ্ধিমান, লেখা আদায়ের ক্ষেত্রেও তেমনি পটু। তাই আমার মতো দীর্ঘসূত্রতাকারীর লেখা এখনও ঢাকা পোস্টে দেখা যায়। এ সুযোগে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের।

সাংবাদিকতার বন্ধুর পথে ঢাকা পোস্টের পথযাত্রা সবে শুরু। শুরুর সকালের দীপ্ত আলো তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতেরই আভাস দেয়। সাংবাদিকতার পথ মসৃণ নয়। জনপ্রিয়তা ধরে রাখা, আদর্শের পথে আপসহীন থাকা, প্রতি পদক্ষেপে নিজের শুদ্ধতার প্রমাণ দেওয়া সহজ নয়। যতটুকু দেখেছি, সে পথে সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা তাদের আছে বলেই মনে হয়েছে। তাদের বস্তুনিষ্ঠতা, আদর্শিক স্পষ্ট অবস্থান, সাহসী উচ্চারণ এ বন্ধুর পথে তাদের সতত জয়যুক্ত করবে বলে বিশ্বাস করি। সামনে আরও প্রসার লাভ করুক ঢাকা পোস্ট, বিপুল জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে যাক, হয়ে উঠুক জনগণের প্রধান মুখপাত্র— এ শুভকামনা রইল ঢাকা পোস্টের জন্য।

অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী।। সহ-সাধারণ সম্পাদক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি