দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশ স্থলে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা খোলা আকাশের নিচেই রাত্রি যাপন করবেন। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে আসা নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে আসতে শুরু করেন। 

সমাবেশে যোগ দিতে আসা নড়াইলের হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তিনদিন আগেই ঢাকায় এসেছি। রাতে এখানেই থাকব। আমাদের সঙ্গে আরও চল্লিশজন নেতাকর্মী এসেছে। 

আরও পড়ুন : গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে ডিএসসিসির ‘আপত্তি’

সিলেটের হবিগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা শফিউদ্দিন বলেন, আমরা চার দিন আগে প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছি। পল্টনেও অনেকবার যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পুলিশি বাধায় যেতে পারিনি। আমারা আন্দোলন করেই ঘরে ফিরব।

এদিকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরীক হতে যান তাদের সবাইকে আগামীকালের সমাবেশে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেই সঙ্গে ঢাকাবাসীকেও সমাবেশে যোগ দেওয়া আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা জানিয়েছেন, আগামীকাল রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ শুরু হবে বেলা ১১টায়। এই সমাবেশ থেকে দলের পক্ষ থেকে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন : নৈরাজ্য করলেই হাত গুড়িয়ে দেবে আওয়ামী লীগ

এর আগে দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়াম চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে খেলা চলায় সম্ভব না। পুলিশের কাছে তারপর আমরা গোলাপবাগ মাঠের কথা বলেছিলাম, পুলিশ লিখিতভাবে অনুমতির জন্য আবেদন করতে বলেছিল, আমরা লিখিত আবেদন করেছি। তারা অনুমতি দিয়েছে। 

তিনি বলেন, আগামীকাল গোলাপবাগে আমাদের সমাবেশ হবে। পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। 

পরে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপির প্রস্তাবিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এরপর সন্ধ্যায় ২৬টি শর্তসাপেক্ষে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। 

মূলত ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য বিএনপি শুরু থেকেই নয়াপল্টনের সড়ক ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর সরকার শুরু থেকেই বলে আসছিল নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

তবে সোহরাওয়ার্দীর বিষয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। তারা আরামবাগ ও সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট স্কুলের মাঠের প্রস্তাব দিলেও পুলিশ তাতে রাজি হয়নি।

এরইমধ্যে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। এতে একজন নিহতও হয়। সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ এবং ওই এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের হটিয়ে দিয়ে নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নেয়।

আরও পড়ুন : অন্ধকার মাঠে গান পরিবেশন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা

এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সাথে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে তারা নয়াপল্টনের পরিবর্তে ঢাকার কমলাপুরে স্টেডিয়ামে সমাবেশের প্রস্তাব দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুরের বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এসবের পর বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তুলে নেওয়ার ৮ ঘণ্টা পর ডিবি তাদের আটকের কথা স্বীকার করে। আর দুপুর আড়াইটার পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এমএম/কেএ