খালেদা জিয়ার চিকিৎসা: বাসা না ইউনাইটেড হাসপাতাল
সরকারের নির্বাহী আদেশের শর্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হতো। তবে পরিবারের ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন বাসার বাইরে যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন তিনি। যদিও সরকারের এ মতামত এখনও লিখিত আকারে হাতে পায়নি তার পরিবার। লিখিতভাবে এই আদেশ পাওয়ার পর চিকিৎসক দল ও তার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে সরকারের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে, নাকি বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, দেশে করোনা শনাক্তের হার আবারও ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা কতটা কার্যকর হবে, এ নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিজ্ঞাপন
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানান, দেশে ইউনাইটেড হাসপাতাল তার পছন্দ। এখানে তিনি আগেও চিকিৎসা নিয়েছেন। এখানকার চিকিৎসকও তার পরিচিত। তার বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেখানকার চিকিৎসকদের। তাই বাসার বাইরে চিকিৎসা নিলে তিনি এ হাসপাতালেই নেবেন। তবে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যার চিকিৎসা আগে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের রিয়াদে। ফলে এসব রোগের ফলোআপ চিকিৎসাও আগের হাসপাতালে নেওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি না থাকায় তাকে এখন দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। আমরা লিখিতভাবে এখনও আদেশের কপি সরকারের কাছ থেকে পাইনি।
বিজ্ঞাপন
বাসার বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আপত্তি নেই, এখন তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথা হয়নি।
খালেদা জিয়ার পরিবার ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’ কথা লিখেছিল তাদের আবেদনে। আমাদের মতামতে লেখা হয়েছে, দেশের ভেতরে তিনি যদি বিশেষায়িত চিকিৎসা নেন, সরকারের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কোনো হাসপাতালও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তিনি তার ইচ্ছামতো হাসপাতাল ও চিকিৎসক নির্বাচন করতে পারবেন। তবে বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাসা থেকেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে হবে এই অবস্থান থেকে সরকার সরে এসেছে, এটা পজিটিভ দিক। এখন সরকারের এ আদেশ লিখিতভাবে পাওয়া গেলে চিকিৎসক দল বৈঠকে বসবেন। চিকিৎসক দলের প্রধান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তার পরামর্শ এবং খালেদা জিয়ার মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন রোগের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিয়মিত তার রুটিন চেকআপও করা যাবে। যেটা তাকে বাসা রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিড়িয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডাম কোথায় চিকিৎসা নেবন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া কতটুকু নিরাপদ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও সিদ্ধান্তহীনতা ভুগছেন বিএনপির নেতা ও পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার জন্য করোনাভাইরাস অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বর্তমানে পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার বাসায় আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু হাসপাতালে সেটা কতটুকু নিশ্চিত করা যাবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে হাসপাতালে ভর্তি করানোও জরুরি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মনে হয় তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেবেন। এখনও এ বিষয়ে আমাদের ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মতামত, বাসায় থেকেই তার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। পত্রিকায় দেখলাম গত কিছুদিন ধরে দেশে করোনা আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। বয়সের কারণে দেশে করোনা আসার পর থেকে আমিও বাসা থেকে বের হই না। এখন ম্যাডামের বয়স তো অনেক বেশি, সেটাও চিন্তা করতে হবে।
খালেদা জিয়ার পরিবারের ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’ আবেদন প্রসঙ্গে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’কথা লিখেছিল তাদের আবেদনে। আমাদের মতামতে লেখা হয়েছে, দেশের ভেতরে তিনি যদি বিশেষায়িত চিকিৎসা নেন, সরকারের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কোনো হাসপাতালও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তিনি তার ইচ্ছামতো হাসপাতাল ও চিকিৎসক নির্বাচন করতে পারবেন। তবে বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর দ্বিতীয় দফায় সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ আবারও ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে সরকার। খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্ত অনুযায়ী, তাকে নিজ বাসা থেকে চিকিৎসা নিতে হতো, তার রাজনৈকি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া এবং বিদেশ যাওয়া ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই গুলশানের বাসবভন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
এএইচআর/এসকেডি/এমএমজে