জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করার পর সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। তাই ৯১ সালের পর দেশে আর গণতন্ত্র নেই। এমন বাস্তবতায় কখনোই উচ্চমানের গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) বিকেলে যমুনা ফিউচার পার্কের কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির বছরব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

জি এম কাদের বলেন, সংবিধানের ৭০, ৯৫, ১০৯ ও ১১৬ ধারা সংযোজন করে দেশের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে অর্পণ করা হয়েছে। সংবিধানকে এমনভাবে সংশোধন করা হয়েছে যাতে দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯৯ শতাংশই সরকার প্রধানের হাতে। এতে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থি। আমরা সংবিধানের ৭০, ৯৫, ১০৯ ও ১১৬ ধারার বিলুপ্তি চাই।  

দেশে গণতন্ত্রের অভাবে সুশাসন ও আইনের শাসন নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ৯১ সালের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয়করণের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, লুটপাট ও দখলবাজিতে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। অপরদিকে দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র নষ্ট করার মাধ্যমে দেশের সুশাসন ও আইনের শাসন নষ্ট করা হয়েছে।

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায় উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেও দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, তাই শাসন ব্যবস্থা সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অভাবে মুনাফালোভী ও দুর্নীতিবাজরা নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে, রমজানের আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমোদ বাবলু বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। দেশের মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদেরের নির্দেশনা এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যরা।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, এস.এম. ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন প্রমুখ।

এএইচআর/জেডএস