মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সম্পদের পাহাড় আছে নাকি ‘মুষ্টি’ সম্পদ আছে তা সরকারের তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির নবনির্বাচিত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। একইসঙ্গে সরকার কারাগারে থাকা নিরীহ আলেমদের মুক্তি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

গত ৭ জুন হেফাজতের ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপে বর্তমান পরিস্থিতিতে হেফাজতের কমিটি গঠন ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেন নুরুল ইসলাম জিহাদী।

হেফাজতের নতুন মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আদিত্য রিমন।

ঢাকা পোস্ট : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের আর্থিক লেনদেন ও সম্পদের বিষয়ে সম্প্রতি তদন্ত শুরু হয়েছে। সেটা কি আপনাদের ওপর কোনো চাপ তৈরি করেছে? কমিটি গঠনে এর কোনো প্রভাব ছিল কি না?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : হেফাজত নেতাদের কার সম্পদের পরিমাণ কতটুকু অভিযোগগুলো সত্য নাকি অসত্য, তদন্তের পরে বের হবে। কী উদ্দেশ্যে সরকার তদন্ত শুরু করেছে, তা তারা বলতে পারবে। এর সঙ্গে হেফাজতের কমিটি গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে নেতাদের সম্পদের পাহাড় আছে নাকি ‘মুষ্টি’ আছে, তা খোঁজাখুঁজি করলেই সরকার বুঝতে পারবে।

ঢাকা পোস্ট : হেফাজতের কমিটি গঠনে কোনো নিয়ম মানা হয়নি- দাবি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীপন্থিদের। আমরাও যতটুকু জানি আপনাদের কমিটি গঠনের আগে কোনো সম্মেলন হয়নি। তাহলে কীভাবে কমিটি হলো?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : সিনিয়র মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২৫ এপ্রিল রাতে হেফজতের কমিটি বিলুপ্ত করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।ওইদিন রাতেই আবার আলোচনা করে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন, এটা তখন ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : নতুন কমিটির কয়েকজন ইতোমধ্যে পদ প্রত্যাখান করে বলেছেন- তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কমিটিতে রাখা হয়েছে। এটা সত্য কি না?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : কমিটি গঠনে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তবে, গঠন প্রক্রিয়ায় শুধু আহ্বায়ক কমিটির নেতারাই ছিলেন। কেউ কমিটিতে থাকবেন না, তা এখন পর্যন্ত আমাদের বলেননি।   

ঢাকা পোস্ট : আগে হেফাজতের কমিটি ছিল ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। এখন ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট। নতুন কমিটির আকার বাড়বে কি না? কারাগারে থাকা যেসব নেতারা বাদ পড়েছেন, তারা আগামীতে কমিটিতে আসতে পারবেন কি না?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : কমিটির আকার বাড়বে। প্রতিটি জেলা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হবেন। তখন ৬৪ জেলার একজন করে সদস্য হবেন। সে হিসেবে সদস্য সংখ্যা বাড়বে। আর কাউকে কমিটি থেকে বাদ দিয়েছি, এটা না বলাই ভালো। কারণ আগে ১৫১ জনের কমিটি ছিল, এখন সেটা ৩৩ জন হয়েছে। যারা বাদ পড়েছেন অবশ্যই তাদের আসার সম্ভবনা আছে। এখানকার নিয়ম-কানুন, কমিটির পরামর্শ ও সিদ্ধান্তে যাদের আনা যায়, অবশ্যই তাদের আনবে।

ঢাকা পোস্ট : সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করতেন সংগঠনের আমির। এবার ব্যতিক্রমভাবে ঢাকা থেকে কমিটি ঘোষণা করা হলো। এটা কি সরকারি চাপে? নতুন কমিটিতে সরকার খুশি কি না?   

মাওলানা নুরুল ইসলাম : কমিটি ঘোষণার দিন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী অসুস্থ ছিলেন। তা না হলে ঢাকায় তাঁর আসার কথা ছিল। আর প্রধান উপদেষ্টাও আসার জন্য রেডি ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ জ্বর আসার কারণে আসতে পারেননি। তার ছেলে কমিটি গঠনের দিন উপস্থিত ছিলেন। আর কমিটি গঠনে সরকারের কোনো প্রভাব নেই। তবে, এখন হয়ত তারা খোঁজ খবর নেবে। এখন একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে পড়েই তো আমরা কমিটি করেছি। কীভাবে করেছি সেটা তো সরকার দেখতেই পারে। কিন্তু আমাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করেনি, তাদের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। আর কমিটিতে সরকার খুশি হওয়া বা না হওয়া তো আমাদের দরকার নেই, আল্লাহ খুশি হওয়া দরকার।

ঢাকা পোস্ট : আপনারা বলেছিলেন হেফাজতের কমিটিতে রাজনৈতিক দলের নেতা থাকবে না। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে রাজনৈতিক নেতা আছে। এর ব্যাখ্যা কী?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কমিটিতে আছেন, এটা ঠিক। তবে তারা কেউ মূল দায়িত্বে নেই। মূল দায়িত্বে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কাউকে না রাখার সিদ্ধান্ত আছে আমাদের। এই কমিটিতে যারা আছেন, সবাই আগের কমিটিতে ছিলেন। আগে কমিটি ছিল ১৫১ জনের। সেখান থেকে বাছাই করে ৩৩ জনকে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : হেফাজতের এই কমিটি কি আগের মতো মাঠের কর্মসূচি পালন করবে। আগের মতো বিক্ষোভ, জ্বালা-পোড়াওয়ের কর্মসূচি দেবে?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : তেমন কোনো পরিস্থিতি আসলে, আমাদের কিছু করা লাগলে, করব। তবে ভাঙচুর তো কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। আগেও যেটা হয়েছে সেটা হেফাজতের কর্মসূচির মধ্যে ছিল না। ভাঙচুর, গোলযোগ সৃষ্টি, অগ্নিসংযোগ হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু হয়ে গেছে; কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে তা সরকার খতিয়ে দেখছে। এই ধরনের কর্মসূচি দিতে হলে আমাদের সুরা কমিটি আছে, তারপর কেন্দ্রীয় কমিটি আছে, সবার পরামর্শক্রমে যেটা করা দরকার, করা হবে।    

ঢাকা পোস্ট : হেফাজতের শফীপন্থিরা কয়েকদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে বলেছিলেন, তারাই ‍মূল হেফাজত। তারা দ্রুত নতুন কমিটি করবেন। কমিটি দিলে তাদের সেই কমিটিকে কি স্বাগত জানাবেন আপনারা?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন ‘আল্লামা আহমদ শফীর ভক্তবৃন্দ’ শিরোনামে। সেখানে কিন্তু হেফাজতের কোনো ব্যানার ছিল না। এখন একটা হেফাজতে ইসলাম আছে। আরেকটা তারা গঠন করবে কেন? তার উত্তর তো আমাদের হেফাজত দিতে পারবে না। তার উত্তর দেওয়ার দরকারও নেই। তারা কিছু করলে আমরা বাধা দিতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আহমদ শফী যে উদ্দেশ্যে হেফাজত গঠন করেছেন, সেই পথেই আমরা চলছি। আপনারা নিজেরাও দেখেছেন, এই হেফাজতে ইসলামে দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেম-ওলামারা এসেছেন। এখানে সবাই উপস্থিত থাকার পরও তারা আরেকটা হেফাজত কাকে নিয়ে করবেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

এএইচআর/জেএস