দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফী আহমদ চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত মঙ্গলবার (১৬ জুন) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে তিনদিনের সময় দিয়ে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। 

নির্ধারিত সময়ে শুক্রবার (১৯ জুন) নোটিশের জবাব দেন শফী। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আজ শনিবার (২০ জুন) বিএনপির নিয়মিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। দলটির একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে শুক্রবার (১৯ জুন) নোটিশের জবাব দেন শফী। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আজ শনিবার (২০ জুন) বিএনপির নিয়মিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে শুক্রবার দুপুরের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের মেইলে তিন পাতার একটি চিঠি পাঠান শফী আহমদ। সেখানে তিনি কবে থেকে বিএনপি করেন, দলের জন্য তার কী অবদান, দল করতে গিয়ে তার নামে কতগুলো মামলা হয়েছে– এসব বিষয় তুলে ধরেন। একই সঙ্গে কী কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। 

সেখানে তিনি উল্লেখ করার চেষ্টা করেন যে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের চাপ ছিল। এ কারণে তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে এলাকার মানুষ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের জন্য তার কী কর্মপরিকল্পনা, সেটাও চিঠিতে তুলে ধরেন। আর নির্বাচনে কারচুপি হলে, মানুষ ভোট না দিতে পারলে কী ধরনের আন্দোলন ও প্রতিক্রিয়া হবে, তার ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করেন চিঠিতে।

ইতোমধ্যে শফী আহমদের ব্যাখ্যা দেওয়া ওই চিঠি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) শফী আহমদের চিঠি পেয়েছি। সেটা আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয়, এটা ইতোমধ্যে দেশবাসী জেনে গেছে। নতুন করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তা প্রমাণের কিছু নেই। তাই বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। সেখানে শফী আহমদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হয়েও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। না হলে আগামীতে অন্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে শুরু করবেন।

ওই নেতা আরও বলেন, শনিবার (১৯ জুন) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠক আছে। সেখানে শফী আহমদের ব্যাখ্যা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হবে। এরপরই তাকে দলে থেকে বহিষ্কার করা হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন শফী আহমদ। এ কারণে দল থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় 

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সিলেট বিএনপির নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, কেউ যেন শফীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ অন্যান্য কাজে অংশ না নেয়।

যা বললেন শফী আহমদ

‘১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগ দেই’– উল্লেখ করে শফী আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এরপর বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আমি সংসদ সদস্য হয়েছিলাম। এখনও স্থানীয় জনগণের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, দল থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। আমি চিঠির জবাব দিয়েছি। এখন আমার জবাবে দল সন্তুষ্ট হবে কি হবে না, সেটা জানি না। কারণ আজই (শুক্রবার) আমি চিঠি দিয়েছি। দলের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

চিঠিতে কী লিখেছেন– জানতে চাইলে শফী আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করেছি। জনগণের চাপের কারণে যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি– এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।’

এএইচআর/এমএআর/