কোথায় লকডাউন, আমি তো দেখতে পাই না : মির্জা ফখরুল
করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ঢাকাতে লকডাউন আছে। কিন্তু আপনারা কোথাও লকডাউন দেখতে পান? কোথায় লকডাউন? আমি তো কিছুই দেখতে পাই না। যার সেখানে খুশি যাচ্ছে, যা খুশি করছে। এমনকি বিয়েও হচ্ছে। গত পরশু আমি একটা হোটেলে দেখেছি বিয়ে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আজ থেকে শুরু হওয়া ৭ জেলার লকডাউন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশেষ একটি প্রাণী আছে, যারা পানি খায়, কিন্তু ঘোলা করে খায়। আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, সুনির্দিষ্টভাবে লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা নেয়নি। এতদিন পরে তারা লকডাউন দিয়েছে।
সরকার লকডাউনের নামে প্রতারণা করছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও লোক দেখানো একটা কারবার। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমরা লকডাউন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, যারা লকডাউন কার্যকর করার কথা, তাদেরকেও দেখা যায় না। তারা দৃশ্যমান নয়। তাদের একজন কনস্টেবল মারা গেছে, সেটার ছবি দিয়ে সংবাদ হয়। আর এদিকে শত শত লোক মারা যাচ্ছে, তার কোনো খবর নেই।
বিজ্ঞাপন
দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত আঙ্কটার্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এখানে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ১১ শতাংশ কমে গেছে। বিশ্বব্যাংকের লোকেরা বলছেন যে, এখানে বিদেশিদের বিনিয়োগ করার কোনো পরিবেশ নেই। কেন নেই? দুঃশাসন, গর্ভানেন্সের অভাব, দুর্নীতি ও সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে এখানে যখন কেউ বিনিয়োগ করতে যায় তখন তাকে কেঁদে কেঁদে সব ফেলে চলে যেতে হয়। তারপরে কনস্ট্রাকশন করতে গেলে চাঁদা দিতেই হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, অথচ সরকারের ঢোল বাজছেই এখানে উন্নয়ন হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নটা কোথায়? কয়েকটা ব্রিজ, কয়েকটা উড়াল সেতু তৈরি করা? এগুলোকে উন্নয়ন বলব নাকি? উন্নয়নটা হচ্ছে যেখানে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, অভাব কমে। যেখানে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই কোটি, সেখানে কোন যুক্তিতে উন্নয়ন বলতে পারি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের অনেক সেক্টরে দারুণ সম্ভাবনা আছে। এখানে ফার্মিসিটিক্যালসের বিশেষ করে এই মুহূর্তে করোনার টিকা উৎপাদনের জন্য একটা পটেনশিয়াল জায়গা। তারপরেও সরকার এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। অবিলম্বে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
এনআইডি নিয়ে সরকার ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছে
এনআইডি প্রকল্পের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চিঠি দেওয়ার পর সরকার সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে দুই লাইনের একটা চিঠি দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা একটা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েও সরকার একটা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছে। যাতে তারা জনগণের পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ইসি থেকে এনআইডি প্রকল্পের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটা সত্যি কথা যে, পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যাপারটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে আওয়ামী লীগের সরকারে যারা আছে, তারা এটা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করবে বলে সবাই বিশ্বাস করে।
বিএনপির মহাসিচব বলেন, এটা শুধু বিএনপির কথা নয়, নির্বাচন কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত যেসব এনজিও আছেন এটা তাদের সবার কথা। সবাই বলছে, এটা কোনো মতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে যাওয়া উচিত নয়। তাহলে সরাসরি সরকারের হাতে পড়ে যাবে।
ভোজ্য তেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
এএইচআর/জেডএস/ওএফ