বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, গণভোট সামনে এলে বিএনপি সংবিধান দেখায়, তাহলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের আগে নির্বাচনের সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জানতে চায় জামায়াতে ইসলামী।

ধর্মভিত্তিক আট দলের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় রাজধানী ঢাকার পুরান পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এই মুহূর্তে একদিকে নির্বাচন, আরেকদিকে ডায়ালগ (আলোচনা) চলছে, আর রাজপথে চলছে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সমাবেশ থেকে সরকার ম্যাসেজ পাবে। 

জামায়াতের এই নেতা বলেন, কালকের সমাবেশ থেকেই জনগণের মতামত কি তা সরকার জানতে পারবে। সরকারকে বোঝাতে চাই জনগণ কি চায়। সেটি সরকার বুঝলে পাঁচ দফা দাবি মেনে নেবে।

আপনারা নভেম্বরে গণভোট চান, আবার সংবিধানে গণভোটের কোনো বিধান নেই, সে ক্ষেত্রে এই আলোচনার শেষ কোথায়? জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এই কথা যদি বলা হয়… গণভোটের বিধান নাই। সেটা সংবিধানে নাই, পঞ্চম সংশোধনীর আগে কিন্তু গণভোট ছিল। তাহলে একটা ফ্যাসিজমের আমলেই যেই সংবিধানটা সংশোধন করা হয়েছে, এটা কিন্তু কোর্টে মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় এলে আমরা বুঝবো সেটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়।

আজাদ বলেন, এই প্রশ্ন যদি কোনো রাজনৈতিক দল তোলেন, তাহলে তারা ফ্যাসিবাদের অবস্থানটাকে সমর্থন করেন, এটা বোঝা যায়। আমিও তাহলে একটা কথা বলতে পারি, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা। ২৬ সালে কি পাঁচ বছর পূর্তি হয়? তাহলে এটা কি সংবিধানে আছে? 

তিনি বলেন, তাদের অপশাসন চাপিয়ে দিয়েছে, তো যারা এই ধরনের প্রশ্ন আবার তোলেন, সংবিধান বড়? না জনগণের অভিপ্রায় বড়? জনগণের জন্য সংবিধান? না সংবিধানের জন্য জনগণ।

আট রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা এই জামায়াত নেতা বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বহুবার এই বক্তব্য দিয়েছেন। তো তিনি যদি আজ থেকে কয়েক বছর আগে ফ্যাসিবাদের আমলে এ বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আজকে তো এই কথা আমরাও বলতে পারি যে, সংবিধানে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিধান নির্বাচন হতে পারে না। কোন কোন কারণে সংসদ বাদ হতে পারে, এটা বিষয় আছে। কিন্তু আমার কথা হলো সংবিধানের কথা যে আপনারা উঠাচ্ছেন, এই সরকার কি সংবিধানে গঠিত হয়েছে? তাহলে আপনি সরকার অবস্থান কোথায় যাবে? সুতরাং এই জায়গায় হাত দিতে গেলে বহু ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। 

আজাদ বলেন, কারো যদি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন মন মানসিকতা দেশের জন্য দেশের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়, মৌলিক সংস্কারের দিকে এলে আমাদের সমাধানের দিকে যেতে হবে, জটিলতা তৈরি করা সংবিধানের প্রশ্নে নেই। সমাধানের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া, আল্টিমেটলি তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কিনা এই প্রশ্ন তৈরি হয়ে যাবে। এজন্য আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা একটা সুন্দর সমাধান চাই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসুক। 

সরকারের সমালোচনা করে আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু আদেশ জারি অর্ডার জারির কথা বলেছে। সরকারের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা এনাফ টাইম ছিল। তো আপনি সেখানে দুই সপ্তাহেরও অধিককাল জিনিসটা ঝুলিয়ই রেখেছেন। এটা আমরা মনে করি জাতির প্রত্যাশিত বিষয় ছিল না। এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ছিল। অহেতুক এখানে সময় নষ্ট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে আবার বাস্তবায়নটা একটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে, সেজন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম বসে আলোচনা করার জন্য। সে আলোচনায় উনারা (বিএনপি) সাড়া দেন নাই এবং উনারা জামায়াতের ডাকে সাড়া দেবেন না বলেছেন। তা আমরা বলেছি আপনারা জামায়াতের আর ডাকে যে সাড়া দিতে না চান, কী কারণে আমরা জানি না। কারণ যাই হোক না কেন এটা অতীতই রাজনীতি, একটা ব্যাড কালচার ছিল একদল ডাকলে আরেক দল আসে না, কখনো আবার একসঙ্গে আলোচনা হয় প্রকাশ্যে অথবা আনঅফিশিয়ালি হয়। কিন্তু এবার উনারা প্রকাশ্যেটা বলে দিলেন যে আমরা জামায়াতের সঙ্গে বসবো না, ভালো কথা আমরাও প্রকাশ্যে বলে দিলাম যে আপনারা ডাকেন আমরা যাবো। তো উনারা সে ডাকটা দিতে পারেন নাই, এতে বোঝা যাচ্ছে যে আমরা যে একটা পজিটিভ মাইন্ডে আলোচনার ভিত্তিতে সলিউশন চেয়েছিলাম, সে পজিটিভ মাইন্ডটাকে উনারা সম্মান জানাতে পারে নাই।

তিনি বলেন, আমরা আট দল একত্রে আন্দোলন করছি, যদিও আমরা ফরমাল জোটবদ্ধ নই। তবে পাঁচ দফা দাবিতে জোটবদ্ধ কর্মসূচি দিচ্ছি। আমাদের হাতে একেবারেই সময় কম। আমরা জনগণের মৌলিক যে দাবি, নির্বাচনে ভোটাধিকার সেটা নিয়ে সোচ্চার আছি। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানি, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তৌহিদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান রোকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন।

জেইউ/এমএসএ