কেন্দ্রে ভোটারদের নিরাপত্তায় পুলিশ/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় প্রায় ৪০টি কেন্দ্রে বিএনপি হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউছার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবের কাছে লিখিত এক অভিযোগপত্রে এ কথা উল্লেখ করেন। এ সময় উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে বলা হয়, সকালবেলা বিভিন্ন কেন্দ্রে প্যানিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারেন। বিএনপি প্রায় ৪০টি ওয়ার্ডে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সহিংসতা চালিয়েছে।

এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউছার বলেন, ‘দুয়েকটি অভিযোগ ইসির কাছে জানাতে এসেছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করছে আওয়ামী লীগ।’

অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেছে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভেঙে ফেলেছে ও কেন্দ্র দখল করেছে। আমবাগান এলাকায় বিএনপি সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাঁচলাইশ এলাকায় আমাদের নির্বাচনী এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস-সহিংসতা না থাকলে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়ত। পৌর নির্বাচনে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। করোনাকালে আরও উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা ছিল। আমরাতো অংশগ্রহণমূলক এ নির্বাচনের চেষ্টা করেছি। তারা চেষ্টা করেছে ভোটাররা যেন না আসে।’

এর আগে, ভোট চলাকালে দুপুরে ঢাকার নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চসিকের ভোট বিষয়ে এক গুচ্ছ লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

সেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ভোটের তিন ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত চিত্র দিয়েছি। এটা নজিরবিহীন নির্বাচন। দিনের ভোট রাতে হয়।’

এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানাধীন ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আলাউদ্দিন আলু (২৮) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে হামলা এবং ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাথরঘাটা ওয়ার্ডের পাথরঘাটা বালিকা স্কুল ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা এই হামলা চালান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন চলাকালে নগরের পাহাড়তলীতে আপন ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।  সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড়তলীর পশ্চিম নাসিরাবাদ বার কোয়ার্টার এলাকায় খুনের এ ঘটনা ঘটে। দুই ভাই চসিক নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব বিরোধের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

নিহতের নাম নিজাম উদ্দীন মুন্না। তিনি সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমদের সমর্থক ছিলেন। খুনের দায়ে অভিযুক্ত তার ভাইয়ের নাম সালাউদ্দীন কামরুল। তিনি ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী।

মেয়র পদে ৭ প্রার্থী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মোট সাত জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশে ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। অন্যদিকে, ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। 

চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। এ নির্বাচনে ৪০টি ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ রয়েছে।

এসআর/এফআর