হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। তবে গত কয়েকদিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। কিন্তু কতদিন বা কতক্ষণ স্থিতিশীল থাকে বলা যায় না। কারণ তার শারীরিক প্যারামিটারগুলো উঠা-নামা করছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমানে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে। একটি হচ্ছে, তার রক্তক্ষরণ হয়ে হিমোগ্লোবিন কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যা আছেই। বর্তমানে ওষুধ দিয়ে তার রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তারপরও মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা আগের মতোই আছে। তিনি এখনও সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। কোনো উন্নতি নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওষুধ দিয়ে ম্যাডামের রক্তক্ষরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও মাঝে মধ্যে উনার রক্তক্ষরণ হয়। আবার ওষুধ দিয়ে বন্ধ করতে হয়। হিমোগ্লোবিনও মাঝে মধ্যে কমে যায়।

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের শারীরিক রক্তক্ষরণ ইনজেকশন দিয়ে বন্ধ রাখার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। কারণ এটার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বলেছেন। কিন্তু সরকার ম্যাডামকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশে অ্যাডভান্সড সেন্টারে নেওয়ার জন্য চিকিৎসকরা সুপারিশ করেছেন। উনার বাইপাস করা হলে রক্তক্ষরণ কমে যেতে পারে। কিন্তু সরকার উনাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দিচ্ছে না। কিন্তু এক-এগারোর সরকারের সময় অনেক রাজনীতিবিদ চিকিৎসকদের সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এমনকি বিদেশেও চিকিৎসার জন্য গেছেন। তাহলে এখন ম্যাডামেকে কেন দেওয়া হচ্ছে না। উনাকে বিদেশে যেতে না দেওয়ার যে উদাহরণ আমরা তৈরি করছি তা ভবিষ্যৎ বিরাজনীতি করণের একটি চক্রান্ত।

খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের শরীরের সবগুলো প্যারামিটার নেতিবাচক, আমরা সাধারণ চোখে যেটা বুঝতে পারি। দিন-দিন উনার অবস্থা খারাপই হচ্ছে। কোনো উন্নতি নেই।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য আগের চেয়ে কমে গেছে। কারণ তার খাবারের রুচি একদমই নেই। তেমন কোনো খাবারই খান না। মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে স্যুপ খাওয়ার চেষ্টা করেন। এর বাইরে কোনো খাবারেই তার আগ্রহ নেই।

এ বিষয়ে আব্দুস সাত্তার বলেন, ম্যাডাম মাঝে মাঝে স্যুপ খান। এর বাইরে তেমন কিছু খান না। খাবারের রুচি একদমই নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, ম্যাডাম অনেক শুকিয়ে গেছেন। উনার স্বাস্থ্য আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

চিকিৎসকদের বাইরে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর রাখতে নিয়মিত হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছেন পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি। এর বাইরে প্রায় প্রতিদিনই তাকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভার কেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম ৭৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এএইচআর/এসএসএইচ