প্রবাসে মাতৃভাষার চর্চা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা
কানাডার ক্যালগেরিতে আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে ‘প্রবাসে মাতৃভাষার চর্চা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পোর্টালটির প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা। প্রধান বক্তা ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মাহমুদ হাসান।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বক্তারা প্রবাসে মাতৃভাষা চর্চাকে আরও সুদৃঢ় করতে ও মাতৃভূমির সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের মেলবন্ধন তৈরি করতে ভাষাশিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়া প্রবাসে বাংলাভাষার প্রসারে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন মোহাম্মদ বাতেন, মোহাম্মদ কাদির, আবদুল্লা রফিক, রূপক দত্ত ও কিরন বনিক শংকর।
একুশে পদক বিজয়ী কবি অসীম সাহা আয়োজকদের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি সর্বস্তরে বিশুদ্ধ বাংলা চর্চার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে একটি সত্যিকারের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে উদাত্ত আ্বহান জানান তিনি। কবি অসীম সাহা বলেন, একুশের গৌরবগাঁথায় সমৃদ্ধ হয়েই এগিয়ে যেতে হবে বাঙালি জাতিকে। মাতৃভাষা আর বাংলা সংস্কৃতির অবমাননা কিভাবে জাতীয় প্রগতির অন্তরায় হতে পারে, সে বিষয়েও তিনি বিশদ আলোচনা করেন। মানসম্পন্ন গবেষণা কর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে তিনি সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও লেখকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
প্রবাসী সাংবাদিক এবং নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তার বক্তব্যে প্রবাসে বাংলা চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে মাতৃভূমির সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের সেতুবন্ধন তৈরির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বিদেশে আরও বেশি বাংলা গণমাধ্যমের বিস্তৃতি কামনা করে তিনি বলেন, পরবর্তী প্রজন্ম যেন এসব গণমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে পারে সে ব্যাপারে এখন থেকেই সবার সচেষ্ট হওয়া উচিত। একুশের চেতনা, ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে সযত্নে লালন করে কিভাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে সে বিষয়েও জ্ঞানগর্ব অভিমত প্রদান করেন তিনি।
কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান স্বাগত বক্তব্যে প্রধান অতিথি কবি অসীম সাহা, প্রধান আলোচক সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরসহ সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানিয়ে এ আলোচনার পটভূমি ও বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্ম উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ক্যালগেরির এ বি এম কলেজের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, ভাষার দাবির মধ্যেই নিহিত ছিল গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক স্বাধিকার জাতিসত্তা সম্পর্কে চেতনার উন্মেষ ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের বীজ।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড জিও সাইন্টিস্ট অব আলবার্টার ক্যালগেরি শাখার কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন, একুশের পথ ধরেই আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। একুশের চেতনা, ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রবাসে আমাদের মাতৃভাষার চর্চাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুল্লা রফিক বলেন, একুশের চেতনা অবিনশ্বর, যা আমাদের বাঙালি জাতি সত্ত্বার অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার অনুপ্রেরণা।
‘প্রবাসেও পারিবারিক-সামাজিক জীবনে আমাদের মাতৃভাষার চর্চা বাড়াতে হবে। শুরু করতে হবে নিজের পরিবার থেকে এবং অন্য সংস্কৃতিতেও ছড়িয়ে দিতে হবে।’
সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভ্রান্ত দ্বিজাতিতত্ত্ব বা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিস্ফোরিত হয় এ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। বাংলাদেশের সকল আন্দোলনের মূলে ছিল এই ভাষা আন্দোলন।
সাবেক ছাত্রনেতা, ট্রাস্টি ও বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাবেক সভাপতি কিরণ বণিক শংকর বলেন, একুশ মানে চাপিয়ে দেওয়া সব বিষয়ে প্রতিবাদ করা। মহান ভাষা আন্দোলনের যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি আজ এতটুকু এগিয়ে এসেছে তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
এসএসএইচ