তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবিনার
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া: ডিজিটাল কনক্লেভ’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দেশটির স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দু’দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এটি দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কেন্দ্র করে দূতাবাস আয়োজিত প্রথম উদ্যোগ।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত, এর সম্ভাবনা ও সাম্প্রতিককালে এ খাতে রপ্তানির অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ) কথা উল্লেখ করে এ অনন্য সুযোগ গ্রহণে দক্ষিণ কোরিয়াসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানান।
কোয়েক্সিমা ও কোটিপার চেয়ারম্যান হোয়ার্ড জাং বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া মোটরযান, যন্ত্রপাতি, জাহাজ নির্মাণ, অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও টেক্সটাইল শিল্পে পরিবর্তন এনেছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তি দক্ষতা ব্যবহার করে এ জাতীয় শিল্প বিকাশে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। পরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করে কোয়েক্সিমা ‘দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর তথ্যপ্রযুক্তি খাত’ শীর্ষক একটি বিশদ উপস্থাপনা তুলে ধরে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির তার বক্তব্যে বিস্তৃত উপস্থাপনায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বেসিসের কার্যক্রম ও উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি দুদেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে নিয়মিত মতবিনিময় ও দ্বিপাক্ষিক সফরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বেসিসের সিনিয়র সহ সভাপতি ফারহানা রহমান বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া বিশেষত ই-গভর্নেন্সের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি ডিজিটাল ডিভাইস তৈরিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
পরে টিকন সিস্টেম লিমিডেটের এম এন ইসলাম, ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা’ শীর্ষক উপস্থাপনায় দুদেশের মধ্যকার সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর ওপর আলোকপাত করেন।
এরপর ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- স্যামসাং, কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার, কোরিয়া ইনোভেশন প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশন, সাইবার ইউনিভার্সিটি অব কোরিয়া, গ্লোবাল কন্ট্রোল সিস্টেম কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে সংস্থার চলমান উদ্যোগগুলো নিয়ে আলোচনা করে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে এ খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় গবেষণার ওপর জোর দেন তারা।
পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য অনলাইনে তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ওয়েবিনারে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর বাংলাদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি বাংলাদেশে ক্রমশ বাড়ছে বলে তিনি জানান। কোরিয়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেবলমাত্র শ্রম-নিবিড় উৎপাদনের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশি তরুণ, উদ্যমী ও মেধাবী উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত উচ্চতর প্রযুক্তি, পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির গন্তব্যস্থল হিসেবে এখন থেকে বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, এ ওয়েবিনারটির মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হলো যার মাধ্যমে বাংলাদেশ কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট মূলধারার সংস্থাগুলো ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যিক কাউন্সিলরের ধন্যবাদ দেওয়ার মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শেষ হয়।
এসএসএইচ