আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরব আমিরাতকে উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশ বা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ছোট কোনো বাজার হিসেবে বিবেচনা করে না। বরং দেশটি আঞ্চলিক পারিপার্শ্বিকতা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো অতিক্রম করে সাধারণভাবে বিশ্ব বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক ও বিকাশমান অর্থনীতি এখন দেশটির মূল লক্ষ্য।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ‘শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তির জাতীয় কৌশল’ ঘোষণা করেছে। বেশ কয়েকটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে নতুন প্রণীত কৌশল সম্পূর্ণ সাফল্যের গ্যারান্টি দেবে বলে আশা করা যায়।

ক. বিশেষজ্ঞ প্রজন্ম, যারা চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি এ অঞ্চলের অন্যতম স্থিতিশীল অর্থনীতি। বৈশ্বিক ক্ষেত্রগুলোতে রয়েছে দেশটির আকর্ষণীয় বিনিয়োগ। আমিরাত প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা অর্থনৈতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসূচি এবং নীতি পরিচালিত করছে। দেশটিতে বিশেষজ্ঞদের একটি বড় প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা সংহত শিল্পের চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম।

খ. কৃষি উৎপাদনে ঝুঁকছে আমিরাত
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সারাবিশ্বে আমদানি-রফতানি স্থবির হয়ে পড়লেও নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বলতে গেলে পুরোটাই মরুভূমি। দেশটিকে তাদের খাদ্যের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। খাদ্যের এ জোগান অব্যাহত রাখতে দেশটি বিদেশের মাটিতে কৃষিখাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে থাকে।

কিন্তু মারাত্মক সংক্রামক করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন লকডাউনে, খাদ্য সরবরাহ এবং কৃষি উৎপাদন যখন হুমকির মুখে, বেশিরভাগ দেশে আমদানি-রফতানি যখন বন্ধ, ঠিক তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের খাদ্য আমদানি প্রক্রিয়াও ঝুঁকিতে পড়ে। দেশটির এ ক্রান্তিকালে স্থানীয় কৃষি খামারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশটির সরকার স্থানীয়ভাবে কৃষি উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে মনযোগ দিয়েছে। খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের এটা করতে হয়েছে।

অত্যন্ত গরম আবহাওয়া এবং পানির অভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বাভাবিক কৃষিকাজ সম্ভব নয়। সেখানে ভার্টিক্যাল ফার্মিং অর্থাৎ বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি ঘরের মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অতীতে সরকার এ রকম ব্যয়বহুল কিছু প্রকল্প শুরু করলেও পরে সেগুলো বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তেল সমৃদ্ধ দেশটি পেট্রো ডলারের জোরে আবারও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈরী আবহাওয়ায় কম পানি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ২০১৯ সালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিপণ্য উৎপাদন প্রকল্পে ২৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়। আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অফিস (এডিআইও) ভার্টিক্যাল কৃষিখামার নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোফার্মস-সহ চারটি কোম্পানিকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে।

অ্যারোফার্মসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড রোজেনবার্গ বলেন, ‘‘যেখানে বিশ্বের কোথাও কোথাও বলা হয়, আগে প্রমাণ করে তারপর কথা বলতে এসো। সেখানে ইউএই ভাবছে, ‘আমি এটা প্রথমে করব তারপর এটাকে আরও বড় এবং ভালো করব’ তারা এই মানসিকতা নিয়ে এগোচ্ছে।’’

অ্যারোফার্মস আবুধাবিতে আট হাজার ২০০ বর্গ মিটারের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করেছে। সেখানে তারা তাজা ফলমূল এবং সবজি উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে। অ্যারোফার্মসের দাবি, কিছু শস্য তারা মাঠের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কম পানি খরচ করে উৎপাদন করতে সক্ষম। ফলে খরচ কমে আসবে।

‘‘যুক্তরাষ্ট্রে আমরা আমাদের পণ্যের দাম খেতে উৎপাদিত পণ্যের দামের সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখানেও (আবুধাবি) এটা করতে চাই। এটাই হবে আমাদের সক্ষমতার পরীক্ষা। আশা করি আমরা জিতব।’’

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবুধাবিতে এক লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টন সবজি উৎপাদিত হয়েছিল।

মুহাম্মাদ শোয়াইব
গবেষক, এমিরেটস সেন্টার ফর স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ (ইসিএসএসআর)

এসএসএইচ