দক্ষিণ আফ্রিকায় যুবলীগ কর্মীকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। ছয় অপহরণকারীর হাত থেকে কৌশলে নিজেকে রক্ষা  করতে সক্ষম হয়েছে ভুক্তভোগী সাঈদুল হক (৩২)। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকালে বাসা থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে জোহানসবার্গের এডওয়ার্ড নামক এলাকা থেকে তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটে।

সাঈদুল হককে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ছয়জন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মধ্যে দুজন সাঈদুলের পাশাপাশি হাঁটছে। সাঈদুলকে টার্গেট করে সামনে থেকে হেঁটে আসছে আরও চারজন। কাছাকাছি এসে ওই যুবকরা তাকে (সাঈদুল) কেন্দ্র করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। সাঈদুল ঘটনা আঁচ করতে পেরে উল্টো দিকে দৌড় দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটু পরই কৃষ্ণাঙ্গ যুবকরা তাকে ধরে ফেলে। ধরে এনে একটি সাদা ও নীল রঙের পুরাতন মাইক্রোবাসে তোলার সময় সাঈদুল দৌড়ে পাশের একটি ভবনে ঢুকে পড়ে নিজেকে নিরাপদ করেন। এ দৃশ্য রাস্তায় লাগানো একটি সিসিটিভিতে রেকর্ড হয়েছে।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাইদুল হক বলেন, দুই দিনে দুইবার আমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকরা। আমি ১১ বছরের প্রবাস জীবনে কারও সঙ্গে রাজনৈতিক বা টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা তো দূরের কথা, কারও সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়নি। বুঝতে পারছি না কারা আমার সঙ্গে এমনটা করতে পারে।

এ ঘটনায় তিনি স্থানীয় ক্রুগারডর্প পুলিশ স্টেশনে মামলা করেছেন (মামলা নম্বর Krugersdorp ref nr CAS 719/3/2021)। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনার বিষয়টি তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন সাঈদুল। দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় সব রকমের সমর্থন ও সহযোগিতা করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীদের অপহরণের শিকার হয়ে অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনা দেশটিতে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বাংলাদেশিদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রবাসীরা সরকারের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত যেসব বাংলাদেশি এমন অপকর্মে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

যুবলীগ কর্মীকে অপহরণ চেষ্টার বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সাঈদুল হককে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অপহরণ করার চেষ্টা করতে পারে। সে সব সময় ফেসবুকে রাজনৈতিক পোস্ট দেওয়ার বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এটা করিয়েছে বলে আমার ধারণা। তিনি বলেন, তার কাছে তেমন টাকা পয়সা নেই যে কোনো চক্র অপহরণ করে অর্থ আদায় করতে চাইবে। পুরো ঘটনা রহস্যজনক। যেহেতু মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর রাখছি। এর পেছনে কে বা কারা আছে তা দেখে ছাড়ব।

দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদের সময় থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় বাংলাদেশ বাংলাদেশ থেকে একজন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য কিংবা পুলিশের কাউকে এখানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছি। যাতে এখানে যারা এসব অপহরণ, ডাকাতি, খুনখারাপি করে তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় সবাই আশ্বাস দিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এসএসএইচ