বাংলাদেশি চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. মুনির হোসেন খানের উদ্ভাবনীর সফল প্রয়োগে কেউই করোনায় আক্রান্ত হননি। তার দাবি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ২এম পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া পেয়েছে এবং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কিছু সাধারণ খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে রক্তের প্রোটিন (আলফা-২ ম্যাক্রোগ্লোবুনিল- এ২এম) স্বাভাবিক মাত্রায় বজায় রেখে সুস্থ জীবনযাপনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

কানাডার আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ তথ্য বেরিয়ে আসে রোগীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনায়।

আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মো. মামুনুর রশিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ মুনির হোসেন খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পারভিন মুসতারী ও ইয়াসমিন মুশতারী।

বক্তারা ডা. মুনির হোসেনের উদ্ভাবিত এ২এম পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, মানবদেহের নিয়ন্ত্রণে তার পদ্ধতির বিকল্প নেই। পদ্ধতিটির প্রসার বৃদ্ধিতে সবাই একমত পোষণ করেন। 

আলোচনায় অংশ নেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইহতেরাব হোসেন, কাজী ফারুক আহমেদ, প্রফেসর কে এফ এম গোলাম কিবরিয়া, মনিরুল ইসলাম, মোশতাক আহমেদ, তানভীর মো. ইসতিয়াক, মোজাম্মেল পাঠান, খন্দকার রফিকুল হক এবং জিহাদুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে এ২এম পদ্ধতি ব্যবহারকারী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, গত পাঁচ বছরে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকার পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। মানবদেহের জন্য খাবারগুলো খুবই উপকারী।

প্রধান অতিথি ডা. মুনির হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছরের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, মানবদেহের রক্তে এই এ২এম প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকলে আমাদের কোনো না কোনো রোগ দেখা দিতে থাকে। কারণ বেশিরভাগ রোগ শুরু হয় প্রায় ৫০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থের (প্রোটিয়াস) কোনো না কোনো একটি বা একাধিক প্রোটিয়াসের (অতিরিক্ত পরিমাণ) বিষক্রিয়ার কারণে। এ২এম পদ্ধতি এসব অতিরিক্ত প্রোটিয়াস আমাদের অজান্তেই সর্বক্ষণ শরীর থেকে প্রতিনিয়ত বের করে দিয়ে সুস্থ রাখে। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তা এই এ২এম দিয়েছেন প্রাণিজগতের সব প্রাণির মধ্যে একটি জীবনরক্ষাকারী প্রোটিন হিসেবে৷ 

তিনি আরও বলেন, আমার উদ্ভাবিত পদ্ধতি কিছু সাধারণ এবং সহজলভ্য খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪৬৫ জন (৩০–৮২ বছর) গত ৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন৷ আশ্চর্যজনকভাবে এদের কারোরই কোনোরকম শারীরিক সমস্যা যেমন- জ্বর, সর্দি অথবা কাশিও হয়নি৷ এমন কি ৪৬৫ জনের কেউই করোনায় আক্রান্ত হননি। অথচ ৫ বছর আগেও এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কোনো না কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল৷

বিশেষ অতিথি নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পারভিন মুশতারী বলেন, ডা. মুনির হোসেন খানের পদ্ধতিতে আমি বেশ উপকৃত, এজন্য তার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে বলব তার পদ্ধতি ব্যবহার করে আমার কণ্ঠ এবং শারীরিকভাবে আমি সুস্থ।

নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমি পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও সহজলভ্য প্রাকৃতিক এই খাবারগুলো আমি এখন নিয়মিত খাচ্ছি এবং বেশ উপকার পেয়েছি।

ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইহতেরাব হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ পাঁচ বছরে অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান করেছি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মধ্যে অন্যতম জয়েন্টের ব্যথা।

খন্দকার রফিকুল হক বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা এ পদ্ধতিতে অনেক উপকৃত হয়েছি। প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য এ পদ্ধতি মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মনিরুল ইসলাম ও তানভীর মো. ইসতিয়াক একমত পোষণ করে বলেন, করোনা মহামারির মুহূর্তে ডা. মুনির হোসেনের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে সবাই যাতে তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এর প্রচার ও প্রসার ব্যাপকহারে বাড়াতে হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. মুনির হোসেন খান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া এবং চিলড্রেনস হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়ায় ফ্যাকাল্টি পজিশন নিয়ে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত হয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪৪টি পিয়ার রিভিউ জার্নালে এবং তিনটি বই লিখেছেন।

তার উদ্ভাবিত এ২এম পদ্ধতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এতে তিনি সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

এ২এম পদ্ধতি
দৈ – ১ কাপ, কুচি করে কাটা কাঁচা রসুনের কোয়া ২টি, কাঁচা আদা- কুচি করে কাটা (১ চামচ), কালোজিরা – ১ চামচ, পুদিনা পাতা – ৬টি কুচি করে কাটা, মধু - আধা চামচ, লবঙ্গের গুড়া - আধা চামচ, হলুদের গুড়া - আধা চামচ, যেকোনো বেরি জাতীয় ফল ৬টি, আঙ্গুর ৬টি, খেজুর ১টি, ডুমুর ১টি কুচি করে কাটা, ২টি লেবুর রস, ডিম ১টি। এসব খেতে হবে কাঁচা, কোনো অবস্থাতেই তাপ ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় তিন লিটার পানি খেতে হবে। কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং ধূমপান ও যেকোনো নেশা জাতীয় পদার্থ বর্জন করতে হবে।

এসএসএইচ