রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। শনিবার (১৭ এপ্রিল) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে উদযাপিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
 
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি  এবং দেশের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর মুজিবনগর সরকার গঠনের পটভূমি ও তাৎপর্যের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। 

আলোচনা পর্বে আলোচকরা মুজিবনগর দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত মুজিবনগর সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনাসহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুজিবনগর দিবস উদযাপিত

সমাপনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান; ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ বীরাঙ্গনাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। 

তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হবার কারণে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছিল। তাছাড়া, এই সরকার শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা ও যুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

এ প্রসঙ্গে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে কূটনীতিকদের বিশাল অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, সেসময় তারা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছিল এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের কূটনৈতিক ফ্রন্টে যোগ দিয়েছিল। তারা মুজিবনগর সরকারের হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে জনমত গঠনে, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রাপ্তিতে এবং বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা ভূমিকা পালন করেছিল। ফলস্বরূপ, কয়েকটি দেশ ছাড়া, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সেসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। রাষ্ট্রদূত এরপর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। এই বৈদ্যনাথতলাকেই পরে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

তাই দিনটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে চিরভাস্বর এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।

অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এ দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

এইচকে