কানাডার অন্টারিও প্রদেশে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ
কানাডার অন্টারিও প্রদেশে আন্তঃপ্রদেশ ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে। এছাড়া জরুরি অবস্থা এবং ‘স্টে হোম অর্ডার’ দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিনোদনমূলক কার্যক্রমেও নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, প্রদেশের জন্য ‘কয়েকটি বিকল্প বাকি রয়েছে’। কারণ সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ডের হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশটির প্রধান চারটি প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়া, অন্টারিও, কুইবেক এবং আলবার্টায় করোনার নতুন ধরন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। এজন্য শনিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে প্রদেশে কারফিউ জারির কথা বলা হয়েছে। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে ইতোমধ্যে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
কানাডার প্রধান চারটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রদেশ অন্টারিও। প্রদেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রদেশের স্থানীয় পাবলিক হেলথের চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের অনেকেই মাস্ক না পরায় ও ক্রমাগত সামাজিক দূরত্ব মানায় অনীহা দেখানোয় চিকিৎসকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে অন্টারিও প্রদেশে করোনা নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ায় তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ কারণে অন্টারিও প্রদেশে ৭ এপ্রিল জরুরি জনস্বাস্থ্য বিধিনিষেধ বা ‘স্টে হোম লকডাউন’ জারি করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অন্টারিও প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড অন্টারিওর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় ‘স্টে হোম অর্ডার’ এখন কমপক্ষে ২০ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এতে অন্টারিও আন্তঃপ্রদেশ ভ্রমণকে সীমিত করছেন ডগ ফোর্ড। অন্টারিওর সলিসিটার জেনারেল সিলভিয়া জোনস বলেছেন, কেউ এখন বাসস্থান থেকে বের হলে তার কারণ জানতে চাইবে। বাইরে বের হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের থামানোর কর্তৃত্ব থাকবে।
বর্তমানে অন্টারিও প্রদেশে মানুষ যে হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ধারণা করা হচ্ছে আগামী এক মাসের মধ্যে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
গত বছর যখন করোনার প্রকোপ দেখা দেয়, তখন প্রতিদিন আক্রান্ত হতো হাজার খানেক। তখন সব নন ইমার্জেন্সি ও নন অ্যাসেনশিয়াল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের চলাফেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এখন পরিস্থিতি তার চেয়ে পাঁচগুণ বাড়লেও নানাভাবে তা ঢিলেঢালা কায়দায় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক ঘোষণায় বলেছেন, ফেডারেল সরকার অতিরিক্ত আট মিলিয়ন ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন সুরক্ষিত করেছে। কানাডা ইতোমধ্যে যে ভ্যাকসিন ডোজ কিনে নিয়েছে এখনকার ফাইজার-বায়োএনটেক শটগুলো বিদ্যমান ডোজের অতিরিক্ত থাকবে। তিনি জানান, মে মাসে আরও চার মিলিয়ন ডোজ, জুনে দুই মিলিয়ন অতিরিক্ত শট এবং তৃতীয় কোয়ার্টারে থেকে চার লাখ ডোজ যুক্ত হবে। জুলাই মাসে বিতরণে অতিরিক্ত দুই মিলিয়ন ডোজ যুক্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, কানাডা সরকার দেশটির নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া নাগরিকরা যেন দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৩ হাজারে। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ হাজার ৫৯১ জন আর সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৩ হাজার ৫৫৩ জন।
এসএসএইচ