‘জুম প্রযুক্তি ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা

গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে যাচাই-বাছাইহীন তথ্য প্রচারের সুযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহারের আশংকাও তৈরি হয়েছে।

উত্তর আমেরিকায় ‘জুম প্রযুক্তি ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ আশংকা ব্যক্ত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মূলধারার গণমাধ্যমকে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে।

‘প্রথাগত মিডিয়া পছন্দের বাইরে অন্যদের বক্তব্য প্রচারের তেমন সুযোগ দেয় না।’

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শত মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ করে দিয়েছে।’

‘চিকিৎসা বা ওষুধের মতো বিষয়ে যাচাই-বাছাইহীন তথ্যের প্রচার মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’

‘প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়াই এখন পর্যন্ত তথ্য প্রবাহের নিয়ন্ত্রক, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে।’

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে টরন্টো থেকে আলোচনাটি সরাসরি সম্প্রচার হয়। এতে আংশ নেন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ড. শিরিন হক, সাউথ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান এবং দ্যা ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. সেজান মাহমুদ। 

ড. শিরিন হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি মানুষকে নিবিড়ভাবে যুক্ত হতে সহায়তা করেছে। প্রথাগত মিডিয়া তাদের পছন্দের বাইরে অন্যদের বক্তব্য প্রচারের তেমন সুযোগ দেয় না। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শত মানুষের কথা বলার এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ করে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, তবে যাচাই-বাছাইহীন তথ্য মানুষের মধ্যে সংশয় ও আতংক তৈরি করে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। 

ড. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই পাঠক প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়ার বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে। প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়া খবর পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। বিশ্বের সব দেশেই মিডিয়া একটি ব্যবসা। বড় বড় মিডিয়ার মালিকানাও ব্যবসায়ীদের হাতে। তবে গাড়ি কোম্পানির পাবলিক সার্ভিস আর হাসপাতালের পাবলিক সার্ভিসের তফাৎ বোঝা মিডিয়ার জন্য জরুরি। কেননা মিডিয়াকে সমাজে হাসপাতালের ভূমিকা পালন করতে হয়। 

ড. সেজান মাহমুদ বলেন, করোনাকালে ভুলভাল চিকিৎসা পরামর্শ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ সেটা অনুসরণও করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সামনে বোঝা যাবে। 

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অখ্যাত কোনো শিল্পী বা লেখক বিখ্যাত হয়ে গেলে তা অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার। কিন্তু চিকিৎসা বা ওষুধের মতো বিষয়ে এই যাচাই-বাছাইহীন তথ্যের প্রচার মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে তার সঠিকতা এবং গুণগত মান যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়াকে এখন পর্যন্ত তথ্য প্রবাহের নিয়ন্ত্রক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিকাশের যুগে গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এআরবি/এইচকে