প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক ও ন্যক্কারজনক আচরণে কানাডায় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) কানাডার ক্যালগেরিতে আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় প্রধান অতিথি ও মূল বক্তা ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।

আলোচনায় বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান। পরবর্তীতে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা আরও নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেন। পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের এই জঘন্যতম ঘটনাকে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের প্রতিকূলতার পাশাপাশি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার শামিল বলে মন্তব্য করেন তারা।

আলোচনায় অংশ নেন ড. মোহাম্মদ বাতেন, মোহাম্মদ কাদির, আবদুল্লা রফিক, রুপক দত্ত এবং কিরণ বনিক শংকর। 

প্রবাসী সাংবাদিক এবং নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তার বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় সচিবালয়ে আটকে রেখে, তাকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে সচিবের দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনের শাসনের প্রতি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তাৎক্ষনিক আইনি পথে না গিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের সাথে স্পষ্টত মাস্তানি করেছেন। এ মাস্তানতন্ত্র অবসানের পাশাপাশি তিনি দ্রুত রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি করেন।

কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অতীতে বহু চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ইস্পাত-দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। তার অতীত কর্মকাণ্ডে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান শুধু পেশাগত দায়িত্ববোধ নয়, শেখ হাসিনা ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেই তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তার মতো একজন সিনিয়র সাংবাদিক সচিবালয়ের কর্মচারীদের হাতে যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, অতি দ্রুত এর প্রতিকার না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনের শাসনের প্রশ্নে দেশের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

ক্যালগেরির এ বি এম কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। দুর্নীতি নির্মূল, আইনের শাসনের সহযোগী হিসেবে যারা চরম দুঃসময়েও জাতির পাশে থাকে, সেই সমাজের একজন সিনিয়র সাংবাদিক যদি সচিবালয়ের মতো স্থানে এভাবে নিগৃহীত হন তা আমাদের চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি এর দ্রুত প্রতিকার দাবি করেন। 

অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড জিও সাইন্টিস্ট অব আলবার্টার ক্যালগেরি শাখার কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন, সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনার ওপর বর্বরোচিত হামলা গণতন্ত্র ও মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর চপেটাঘাত। রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও নির্যাতনকারী কর্মচারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি আবদুল্লা রফিক বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকার স্বাধীন গণমাধ্যমের নীতিতে বিশ্বাসী। এটিকে প্রমাণ করার জন্য হলেও অনতিবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। 

সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত বলেন, রোজিনা ইসলাম একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও নারী সমাজের প্রতিনিধি। নিকট অতীতে প্রমাণ আছে, সাংবাদিক সমাজ গর্জে উঠেছিল বলেই চরমপন্থি স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আজ আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে। সেই সাংবাদিক সমাজকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে দ্রুত এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার করে সরকারকে তার স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে হবে। 

সাবেক ছাত্রনেতা, বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কিরণ বণিক শংকর বলেন, সরকারি কর্মকর্তার অফিস থেকে যেকোনো তথ্য সংগ্রহের অধিকার একজন সাংবাদিকদের আছে। কী এমন গোপনীয় তথ্য এই কর্মকর্তার টেবিলে ছিল যা প্রকাশিত হলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? তাহলে কি জাতির উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতির কোনো মহাপরিকল্পনার ফাইল সেখানে রক্ষিত ছিল, যেটি রোজিনা ইসলামের হস্তগত হওয়ায় স্বাস্থ্য সচিবের কর্মচারীরা তার ওপর হামলে পড়েছে? 

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে বলেন, দুর্নীতিবাজ চক্রকে আইনের আওতায় এনে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দিয়েই শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হবে।

এইচকে