রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সমাবেশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার  বিকেলে। সমাবেশে লেখক, সাংবাদিক এবং জনসমাজের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

এ সমাবেশ থেকে বলা হয়, সাংবাদিক রোজিনাকে নিপীড়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার কণ্ঠ চেপে ধরার প্রয়াসের নগ্ন বাস্তবতা উঠে এসেছে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। রোজিনা ইসলামকে যারা হেনস্তা করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে ও তাদের বিচার করতে হবে। অনতিবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।  

নাট্যকার ও সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক, লেখক-সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী। দেশের একজন সাংবাদিকের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশে ও প্রবাসী জনসমাজের প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিবাদে নেমে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি আইনে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে আছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম

প্রবীণ সাংবাদিক সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেছেন, ওয়াশিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার ও হেনস্তা করা নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। এ নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে এবং রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও হয়রানি করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানান।

আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহম্মদ সাঈদ বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ বাকস্বাধীনতা। আজ আমাদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। প্রবাসী সাংবাদিকদের মতো দেশের সাংবাদিকরা যদি এখনি সংঘবদ্ধ না হন, তাহলে এমন ঘটনার বারংবার দেখা দেবে।

সমাবেশে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী শেখ আখতারুজ্জামান তার বক্তৃতায় বলেন, রোজিনা ইসলামের নামে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সারমর্ম দেখলেই ধারণা পাওয়া যায় এ মামলা বিদ্বেষপ্রসূত। এ মামলার কোনো ভিত্তি নেই।  

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল রাতে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকু বলব, এ রকম একটি ঘটনায় সরকার ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হোক—এ রকম কোনো সন্দেহ যদি থাকে, তাহলে সরকার সেটি দূর করার চেষ্টা করবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট সুব্রত বিশ্বাস বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে একের পর এক এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে আজ সত্য জানার এবং জানানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা রওশন আরা নিপা বলেন, আমলাতন্ত্রের একজন কর্মচারী যেভাবে একজন সাংবাদিকের ওপর শারীরিক নির্যাতন করেছে তা ন্যাক্কারজনক।  

সাংবাদিক মনিজা রহমান বলেন, আজ সারা বাংলাদেশের সব সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম হয়ে উঠেছেন। তার ওপর হামলা মানে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ওপর হামলা। 


রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও হেনস্তাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন


লেখক রওশন হক বলেন, রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চিহ্নিত লুটেরাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ডাইভার্সিটি প্লাজার সমাবেশে কিছুক্ষণ পরপর রোজিনা ইসলামে মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন- লেখক সাংবাদিক শামিম আল আমীন, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, এফ এফ এম মিসবাউজ্জামান, নিহার সিদ্দিকী, শহীদুল ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন সেলিম, এম বি তুষার, এইচ বি রিতা, গোপাল স্যান্যাল, বিশ্বজিত সাহা, রোকেয়া দীপা ,  মনজুরুল হক, শিরিল হাসান, জাকির হোসেন বাচ্চু, শামীম আহমেদ, আব্দুশ শহীদ, ইমাম কাজী কাইয়্যুম প্রমুখ।

এনএফ