শায়খ মাহমুদুল হাসান আল-আজহারী

শায়খ মাহমুদুল হাসান আল-আজহারী। ব্রিটেনের খ্যাতিমান বাংলাদেশি মুসলিম স্কলার ও মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব। ধীমান লেখক-গবেষক ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচক হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়। বিলেতভূমিতে ইসলাম প্রচারের অন্যতম পথিকৃৎ।

বর্তমানে লন্ডনের সাউথেন্ড অন সি শহরে অবস্থিত দ্য অ্যাসেক্স জামে মসজিদ ও অ্যাকাডেমির খতিব ও প্রিন্সিপাল। ২০০৭ সালে ‘ইউনাইটেড রিফর্ম চার্চ’ ক্রয় করে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। পরে সেখানে ইসলামিক কমপ্লেক্স গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ইউরোপজুড়ে জনপ্রিয় স্যাটালাইট টিভি চ্যানেল ‘টিভিওয়ান ইউকে’ ও QnS Academy London-এর পরিচালক। এছাড়াও আধ্যাত্মিকতার জগতে তিনি পৃথিবীখ্যাত মুসলিম ব্যক্তিত্ব ও পুরোধা শায়খ জুলফিকার আহমদ নকশবন্দির খলিফা।

শিক্ষা, ধর্মতত্ত্ব ও সমাজ-দর্শন এবং ইসলামের সুমহান বার্তা নিয়ে ছুটে বেড়ান দেশ-দেশান্তরে। আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন পৃথিবীর নগর-বন্দরে। 

সব ঘরানার অসংখ্য তরুণ-যুবার স্বপ্নপুরুষ তিনি। স্বল্প শব্দে ও সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার কর্মমুখর, কল্যাণপ্রসূ ও সৃষ্টিশীল জীবন-পরিধির আলোচনা সম্ভব নয়। তবে তার সাক্ষাৎকারমূলক জীবনকথা ও কর্মগাথা উঠে এসেছে— ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়। তার নিজের ভাষায় ও বর্ণনায় তুলে ধরা হয়েছে বাঙ্ময় কর্মোচ্ছল বয়ন-আখ্যান ও নানা প্রাসঙ্গিকতা।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও রংবেরঙের কর্মস্পৃহাসহ— নানা কিছু উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারধর্মী এই আলোচনায়। উচ্চ শিক্ষার্জনে নানা অভিজ্ঞানের বিষয়-আশয়ও স্থান পেয়েছে এতে। রয়েছে কর্মজীবনের নান্দনিক সূচনা ও বিদেশ-বিভুঁইয়ে ইসলাম প্রচারে তার নিষ্ঠাবিধৌত দাওয়াহ্ কার্যক্রমের কথাও। মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
আমার জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই বছর পর। বাবার কর্মস্থল পতেঙ্গায় অবস্থিত ইস্পাত কারখানা (Chiittagong Steel Mill)-এর সরকারি কলোনিতে শৈশব ও কৈশরের দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে। সুশৃঙ্খল, মার্জিত ও শিক্ষিত আবহে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলাম সেখানে।

কলোনিতে ছিল মসজিদ, মাদরাসা, ও উচ্চ বিদ্যালয়। দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের উপস্থিতি ছিল সেখানে। কাজেই পুরো দেশের সংস্কৃতি ও রীতি-নীতির সমন্বয় ছিল কলোনির পরিবেশে। ধর্মপ্রাণ ও নিবেদিত কিছু স্টাফের কারণে ধার্মিকতা ও দ্বীনচর্চাও ছিল আমাদের বাল্যকালীন পরিবেশে। দেশের স্বনামধন্য আলেমদের আগমন হতো এখানে। বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন হতো সময়ে সময়ে। ধার্মিকতা, আধুনিকতা ও রুচিবোধের বীজ পেয়েছিলাম শৈশব ও তারুণ্যের সেই সময়টাতে।

পড়াশোনার সোনালি-রুপালি দিনগুলো
চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পর ভর্তি হই ‘স্টীল মিল্স’ মাদরাসায়। যেটি মুফতি ইজহারুল ইসলাম সাহেবের অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর হাটহাজারী থানাধীন মেখল ‘হামিউস সুন্নাহ’ মাদরাসায় তিন বছর পড়াশোনা করার সৌভাগ্য হয়। পরবর্তী সময়ে হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় তিন বছর অধ্যয়ন করি। মুফতি ইজহারুল ইসলাম সাহেবের সান্নিধ্যে এক বছর মিশকাতুল মাসাবিহ ও অন্যান্য কিতাবপত্র পড়ি— লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদরাসায়। দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করি ঐতিহ্যবাহী পটিয়া আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়া মাদরাসায়। তখন বেফাকুল মাদারিস কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তাকমীলে প্রথম স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সৌভাগ্য হয়।

ইতোমধ্যে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করে ১৯৯৩ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজে বিএ অনার্স কোর্সে ভর্তি হই এবং উক্ত বিভাগ থেকে যথাক্রমে স্নাতক ও মাস্টার্স প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করার সুযোগ লাভ করি।

উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমন ও পিএইচডি গবেষণা
১৯৯৭ সালে মিসরের বিশ্ববিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ‘আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ পড়ালেখা করার সুযোগ পাই। ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অনুষদের হাদিস বিভাগ থেকে লিস্যান্সিয়েট ডিগ্রি অর্জন করি ১৯৯৯ সালে। Excellent গ্রেডে উত্তীর্ণ হওয়ার সংবাদ ছিল শুকরিয়া ও আনন্দে বিনম্র হওয়ার একটি দিন। তারপর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক ফিলোসফিতে পড়াশোনা করি।

২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের Loughborough University থেকে ২য় মাস্টার্স করি। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের Institute of education-র Doctoral school-এ পিএইচডি গবেষণা শুরু করি।

‘বড় হওয়ার’ প্রেরণা পেয়েছি যেভাবে
কৈশোরে দেখেছি কলোনির পরিবারগুলো শিক্ষা-দীক্ষায় নিজের সন্তানদের বড় করার স্বপ্ন নিয়ে ছুটোছুটি করছে। শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার নীরব সে প্রতিযোগিতা আমাকে তাড়িত করেছিল। যদিও আমি মাদরাসায় পড়েছি; এরপরও আশপাশের বাঁকা দৃষ্টি ও তাচ্ছিল্য আমার কৈশোর-মনকে খোঁচা দিত বারবার। ‘তোমাদের আমি দেখিয়ে দেবো’— এমন জেদ এ কিশোরকে দুর্বিনীত করে তুলতো। সে কারণে কওমী মাদরাসার পরিবেশে বেড়ে উঠেও সব রকম ছুটিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত চর্চা করেছি অবিরত।

বিশ্ববিদ্যালয়েল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। সরকারি বৃত্তি পেয়েছি কয়েক বছর। শিক্ষিত পরিবেশের প্রভাব ও অনেকের তাচ্ছিল্যপূর্ণ দৃষ্টি অদম্য ছুটতে প্রেরণা যুগিয়েছিল নিঃসন্দেহে। মাদরাসার আঙিনায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, প্রাচ্যের হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত বিদ্যানিকেতনে ও পাশ্চাত্যের ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্রতিষ্ঠানে সে প্রেরণা তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল অব্যাহতভাবে। মনের ব্যথাগুলো বক্তব্যের শব্দে ও কলমের অক্ষরে বেরিয়ে আসতে চাইত নিঃসংকোচে। একজন কিশোর এভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতো— সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে ছাপানো অক্ষরে।

লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ততা; প্রথম লেখা ছাপা হয় যখন
আমার বয়স যখন ষোল, তখন সর্বপ্রথম দৈনিক ইনকিলাবের ‘চিঠিপত্র’ কলামে আমার একটি পত্র ছেপেছিল। এখনো মনে পড়ে— সেদিন আমি কেমন শিহরিত হয়েছিলাম। এরপর অব্যাহত লেখালেখির প্রয়াস চালিয়ে গেলাম। দৈনিক ইনকিলাবে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়। মাসিক মদীনা, মঈনুল ইসলাম, দাওয়াতুল হক, দ্বীন-দুনিয়াসহ অনেক ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৯৪ থেকে নিয়মিত মাসিক আত-তাওহীদে যুক্ত হলাম। কয়েক বছর প্রতি মাসে সেখানে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছিলাম। মিসরে পড়ার সময় সেখানের জীবনধারা ও ভ্রমণ নিয়ে লিখেছি নিয়মিত।

কর্মজীবনের শুরুর ও পরের দিনগুলা
আমার জীবনে অনেক শিক্ষক ও বুজর্গ ব্যক্তির ছায়া পেয়েছি। তবে আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.)-এর নির্দেশনা, স্নেহ ও সহযোগিতা ছিল অনন্য মাত্রায়। তিনি আমাকে ১৯৯৩ সালে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান পটিয়া আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়ায় শতাধিক ছাত্রের ক্লাসে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখারও সুযোগ দেন। সাড়ে ঊনিশ বছর শিক্ষকতা করার সুযোগ ছিল আমার অনন্য সৌভাগ্য।

২০০০ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কোরআনিক সায়েন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হই। সেখানে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে যোগদান করি— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। বড় বড় এসব প্রতিষ্ঠানে আমি পেয়েছি— অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সান্নিধ্য পেয়েছি অনেক বীর কর্মযোদ্ধাদের।

ইংল্যান্ডে প্রবাসজীবনের সূচনা যেভাবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে আমি ইংল্যান্ডে আসি। দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি করার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ি বিভিন্ন দা’ওয়াহ কার্যক্রমে। নিয়মিত উপস্থিতি হতে থাকে টিভি-মিডিয়ায়। লন্ডন স্টুডিও থেকে প্রচারিত হয় ‘জীবন-জিজ্ঞাসা’ প্রোগ্রাম, যা সাদরে ইউরোপজুড়ে প্রবাসীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। ইংল্যান্ডে শেকড় এভাবে প্রোথিত হয়ে পড়ে যে— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিতে হয়।

প্রবাসে ভিনদেশিদের মাঝে ইসলামের বার্তা পৌঁছানো 
ব্রিটেনে আসার পর আমাকে লন্ডন থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি শহর ‘সাউথেন্ড অন সি’-তে ছোট্ট একটি মসজিদে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য দাওয়াত করা হয়। আমি ইস্তেখারা করি এবং বরকতপূর্ণ একটি স্বপ্নে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে একটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতে দেখি। আমি বিশ্বাস করলাম যে, নিশ্চয় এ শহরে বড় কোনো প্রকল্প হবে। আলহামদুলিল্লাহ, ২০০৭ সালে দুই মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে এখানে একটি গির্জা ক্রয় করে সংস্কার করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় তিনতলাবিশিষ্ট মসজিদ, ইসলামিক অ্যাকাডেমি ও কমপ্লেক্স। ইংরেজি স্থানীয় পত্রিকায় এই বিষয়ে তখন প্রধান শিরোনাম হয়েছিল- A Church converted to islam বা ইসলাম গ্রহণ করল একটি চার্চ।

আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে অনেক অমুসলিম এখানে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আমরা ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার জন্য ‘ওপেন ডে’ আয়োজন করে থাকি। অমুসলিমরা মসজিদে আসে। প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন টাউন সেন্টারে, হসপিটালে ও পাবলিক প্লেসে ইসলামী দাওয়াহ স্টল করা হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ করা হয় এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের কাছে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। অন্যান্য ধর্মীয় সংস্থার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত ডায়ালগ হয়। পুলিশ বিভাগের জন্য ইসলাম সম্পর্কে ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়। এই জাতীয় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রসারের প্রয়াস পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশিদের জন্য দ্বীনি সেবামূলক কাজ
২০১৬ জানুয়ারিতে আমরা চালু করেছি— নতুন স্যাটালাইট টিভি চ্যানেল ‘টিভি ওয়ান ইউকে (TVONE UK)। পুরো ইউরোপের মুসলিম প্রবাসীদের প্রয়োজন পূরণ ও নির্দেশনা প্রদানে এই প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। Inspired by Islam সংস্থার মাধ্যমে ইংল্যান্ডের শহরে শহরে দা’ওয়াহ ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। নতুন ও পুরাতন প্রজন্মকে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার প্রত্যয়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দা’ওয়াহ কার্যক্রমে ইতোমধ্যে অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়েছে। সে উপলক্ষে আমেরিকা, জার্মান, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, ফিনল্যান্ড, কাতার, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশে সফর করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা
London QnS Academy প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষামূলক কোর্স আয়োজন করা হচ্ছে— ২০২০ সাল থেকে। ভবিষ্যতে যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Rain Drops Trust একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এটির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি— বিগত কয়েক বছর ধরে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষাধারাকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে ও শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রত্যয়ে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও গবেষণা করছি। মহান রাব্বুল আলামিন যেন সহায় হোন।

প্রকাশিত গ্রন্থ ও আগামীদিনের প্রকল্প
ড. ইউসুফ আল-কারাদাভির একটি পুস্তকের অনুবাদের মাধ্যমে আমার গ্রন্থ প্রকাশের যাত্রা শুরু হয়— ১৯৯৫ সালে। বইয়ের নাম ছিল ‘অমুসলিমদের প্রতি ইসলামের উদারতা’। পরবর্তী সময়ে তার স্বনামধ্য অন্য গ্রন্থ ‘দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম’-এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ‘মিম্বারের ধ্বনি’ ছিল আমার নিজস্ব প্রকাশিত গ্রন্থ— যা ২০০৫ সালে ছাপা হয় এবং বারবার মুদ্রিত হয়। ‘মুক্তো কণিকা’ ছোট ছোট আদর্শ গল্পের সংকলন। বর্তমানে ‘জীবন জিজ্ঞাসা’ শিরোনামে কয়েক খণ্ডের প্রশ্নোত্তরমূলক বইয়ের সম্পাদনা চলছে। ‘জীবনের রংধনু’ ও ‘প্রশান্তির নীড়’ নামে আরো দুইটি বইয়ের কাজও চলছে আলহামদুলিল্লাহ।

চিন্তাশীল মাদরাসাশিক্ষার্থীদের প্রতি উপদেশ
জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা, ক্ল্যাসিক ও মডার্ন, ইলম ও আমলের সু-সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে। গতিশীল বিশ্বের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসী অবস্থান তৈরি করতে হবে। বিশ্ব যখন একটি গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে, তখন পুরো বিশ্বের খোঁজখবর রাখতে হবে। কিতাবের পাতায় থাকা জ্ঞানকে বাস্তবতা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে মানবতার সংকট সমাধানে দ্ব্যর্থহীন, ঐকান্তিকতাপূর্ণ সমৃদ্ধ পথ ও পাথেয় আবিষ্কার করতে হবে।

সবার প্রতি শেষের কথা
জীবনের বরফের চাকাটি ধীরে ধীরে বিগলিত হয়ে সংকোচিত হয়ে আসছে। বেলা ফুরাবার আগেই ভালো কাজ করার তাড়া অনুভব করাই সাফল্যের অনন্য চাবিকাঠি। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখুক আমাদের নতুন প্রজন্ম— সে প্রত্যাশা করি। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।