প্রতীকী ছবি

মানুষের নাক বেশ সংবেদনশীল। তাপমাত্রা খানিকটা বদলে গেলে কিংবা নাকে ধুলার মতো খুদে কণা ঢুকলে হাঁচি আসতে পারে। আরও অনেক কারণেই আসতে পারে হাঁচি। আর পরিমিত হাঁচি মানুষের দেহের জন্য উপকারী।

গবেষকরা বলেন, একজন মানুষের ফুসফুসে সব মিলিয়ে ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটির অধিক বায়ুথলি রয়েছে। প্রতি নিঃশ্বাসে এরা সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়। ফলে আমরা শ্বাস নিয়ে বাঁচি।

হাঁচি কেন আসে?

কিন্তু কথা হলো— এই শ্বাসের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার ভাইরাস ও ভ্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে ঢুকতে চায়। এরা নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এদের অনেকেই নাসারন্ধ্রের মিউকাস গ্রন্থি থেকে বের হওয়া বিষাক্ত রসের আঘাতে মারা যায়।

তবে যেসব ভাইরাস খুব শক্তিশালী, তারা আরো সামনে এগিয়ে যায়। তারা প্রতিহত হয়— নাকের ভেতরের ছোট ছোট চুলের মতো সিলিয়ার পক্ষ থেকে। তাদের অনুপ্রবেশে সেখানে এক ধরণের বিদ্যুৎ জন্ম নেয়। আমাদের স্নায়ুর প্রান্তগুলোতে সুড়সুড়ির মতো অনুভূতি হয়।

সে মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায়, নাকের ভেতর খারাপ কিছু ঢুকেছে। মস্তিষ্ক দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়।  একটি বড় শ্বাস নিয়ে আমরা দম আটকাই। বুকের পেশীগুলো টান টান হয়ে যায়। ফুসফুসের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এক ঝড়— হাঁচি! প্রবল গতিতে এগিয়ে আসা— এই হাঁচির মাধ্যমে সেই বিষাক্ত ভাইরাস ও ভ্যাক্টেরিয়াদের তাড়িয়ে দেয়া হয়।

হাঁচি এলে আলহামদুলিল্লাহ পড়া সুন্নত

ওপরের লেখাটুকু পড়লে বোঝা যায়— হাঁচি মানবদেহের কতো বড় বিস্ময়। হাঁচি এলে আলহামদুলিল্লাহ পড়া সুন্নত। আবার কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়লে, তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলাও সুন্নত। হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহর জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা মুসলিমের হক ও ওয়াজিব। বিভিন্ন হাদিসে এভাবে অভিহিত করা হয়েছে।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দুজন লোক হাঁচি দিল। তিনি তাদের একজনের হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন; কিন্তু অন্যজনের জবাব দিলেন না। তিনি যার হাঁচির জবাব দেননি সে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন, কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে তো (আলহামদুলিল্লাহ বলে) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছে; কিন্তু তুমি তো আলহামদুলিল্লাহ বলোনি। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৪২)

হাঁচি আল্লাহ তাআলার নিয়ামত

হাঁচি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ইচ্ছানিরপেক্ষ নিরাপত্তামূলক একটি বিশেষ শারীরিক ক্রিয়া, যা দেহের অনেক অঙ্গের একটির পর একটি সাধারণ নড়াচড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়।

এটি মানুষের দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের দেহ থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের হয়ে যায়। সব ধরনের একটি বা দুটি হাঁচিই আমাদের দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি ক্রিয়া মাত্র। কিন্তু এর বেশি হলে এটি অসুস্থতাও হতে পারে।

সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে বসে হাঁচি দিলে তিনি ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন। লোকটি আবার হাঁচি দিলে রাসুল (সা.) বললেন, লোকটির ঠাণ্ডা লেগেছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৩৭)

তাই ঘন ঘন হাঁচি এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হাঁচির নানা উপকারিতা

সাধারণত বাতাসে উড়ে বেড়ানো বিভিন্ন জীবাণু, ধুলা, পরাগরেণু ইত্যাদি যাতে মানুষের দেহে ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে— তার জন্য মানুষের নাক ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে হাঁচি। হাঁচি দিলে নাকে জমে থাকা সেই ময়লা উপাদানগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।

হাঁচির মাধ্যমে নাকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস পরিষ্কার হয়। এতে ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ফলে আমরা শ্বাস নিতে আরাম বোধ করি।

আমাদের দেহে মশা, মাছি বা অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রবেশও প্রতিরোধ করে হাঁচি। হাঁচি আমাদের ব্রেনকে বেশ সক্রিয় করে তোলে। ফলে অলসতা দূর হয়ে প্রফুল্ল অনুভব হয়।